এক দশক আগে টেলি সিরিজ় ‘গেম অফ থ্রোনস’ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল ‘ঘোস্ট’কে। এ বার জিন প্রযুক্তিবিদ্যা (জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং)-য় ভর করে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পরে পৃথিবীতে ফিরে এল সেই ‘ডায়ার উল্ফ’। আদতে যা একটি বিশেষ প্রজাতির সাদা নেকড়ে। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম, অ্যায়োনোসিয়ন ডায়রাস।
‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ নামক একটি বায়োটেক সংস্থার কর্তাদের দাবি, জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে তাঁরা বিশ্বের প্রথম ‘ডি-এক্সটিঙ্কশন’ (বিলুপ্ত প্রাণী পুনরুদ্ধার)-এর কাজ সফল ভাবে সম্পন্ন করেছেন। সফল ভাবে পরীক্ষাগারে তিনটি ডায়ার উলফের শাবকের জন্ম হয়েছে। ঠিক যেমনটা করেছিলেন হলিউডের ছবি ‘জুরাসিক পার্কে’ জিনপ্রযুক্তি সংস্থা ইনজ়েনের প্রতিষ্ঠাতা জন হ্যামন্ড (ভূমিকায়, অভিনেতা রিচার্ড অ্যাটনবরো) এবং তাঁর সঙ্গীরা।
‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ জানিয়েছে, তাদের বিজ্ঞানীরা প্রথমে ডায়ার উলফের জিনোম (বংশোগতির ধারায় সঞ্চালিত জিন মানচিত্র) পুনরুদ্ধার করে। যা প্রাচীন ডিএনএ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর পরে সেই জিনোমের মৌলিক বৈশিষ্টগুলি চিহ্নিত করা হয়। পরের ধাপে আধুনিক গ্রে উলফ বা ধূসর নেকড়ের ডিএনএ সংগ্রহ করে জিন প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে তৈরি করেন ডায়ার উলফের ‘জেনেটিক কোড’ সম্বলিত ডিএনএ। সেই ডিএনএ প্রতিস্থাপিত করা হয় ধূসর নেকড়ের ডিম্বাণুতে। কারণ জিন বিশেষজ্ঞ রলেন্সের মতে ২৫ লক্ষ বছর আগে বংশগতির ধারায় জিনগত পৃথকীকরণ হয়েছিল দুই প্রজাতির নেকড়ের। ফলে এখনও অনেক জিনগত মিল রয়েছে তাদের।
তবে নেকড়ে নয়, ডায়ার উলফ ভ্রূণের ‘গর্ভধারিণী’ (সারোগেট মাদার) হিসাবে বেছে নেওয়া হয় কুকুরকে। ‘কলসাল বায়োসায়েন্সেস’-এর সিইও বেন ল্যাম আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিজ্ঞানীরা একটি ১৩ হাজার বছর পুরোনো দাঁত এবং ৭২ হাজার বছর পুরোনো খুলি থেকে ডায়ার উলফের ডিএনএ সংগ্রহ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘জিন প্রযুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে এটি ঐতিহাসিক সাফল্য।’’ সদ্যোজাত তিন ডায়ার উলফ শাবকের নাম দেওয়া হয়েছে, রোমুলাস, রেমুস এবং খালেসি। রোমুলাস এবং রেমুস আদতে রোমান উপকথার চরিত্র। গেম অব থ্রোনসের একটি নারী চরিত্রের নাম।যদিও জিন বিজ্ঞানীদের একাংশ এখনও ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’-এর দাবির সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান।