রাত নামলেই আতঙ্ক গ্রাস করে গোটা গ্রামকে। মনে মনে আতঙ্ক, এই বুঝি হানা দিল দাঁতাল হাতি। দাঁতাল হাতির তাণ্ডবে এ ভাবেই প্রায় ১৫ দিন ধরে ঘুমহীন রাত কাটছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের বিহারজুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের।
বিহারজুড়িয়া গ্রামের কাছেই ইউক্যালিপটাসের জঙ্গল। কিছু দূর যেতেই সেই জঙ্গল গিয়ে মিশেছে শাল জঙ্গলে। সেখানেই প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে ঘাপটি মেরে রয়েছে দাঁতাল হাতি। দিনের বেলায় জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়ে বসে থাকলেও রাত নামতেই খাবারের খোঁজে হাতি হানা দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী গ্রামে। হাতির হানায় গত দু’সপ্তাহে গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১০টি দোকান এবং বাড়ি। বৃহস্পতিবার রাতেও গ্রামে হানা দিয়ে একটি ধানের আড়তের দরজা ভেঙে ধান খায় হাতিটি। পরে একটি দোকানের শাটার ভাঙার চেষ্টা করে সে। রাতভর তাণ্ডব চালিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই হাতিটি ঢুকে পড়ে জঙ্গলে।
দোকানমালিক শিবদাস রায় বলেন, “এই দোকান চালিয়ে কোনও মতে সংসার চালাই। আমার দ্বিতীয় কোনও রোজগার নেই। কিন্তু হাতি এসে দোকানের শাটার ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি দোকানের বেশ কিছু আসবাবও নষ্ট করেছে।’’
বিহারজুড়িয়া গ্রামেরই বাসিন্দা বিদ্যুৎ ঘোষের বাড়িতে হাতিটি হানা দিয়েছিল দিন দুই আগে। শুঁড়ের আঘাতে গুঁড়িয়ে গিয়েছে তাঁর মাটির বাড়ির একাংশ। বিদ্যুৎ বলেন, “দিন দুই আগে দেওয়াল ভেঙে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি হাতির শুঁড় আমাদের ঘরের মধ্যে। শুঁড় দিয়ে হাতিটি ঘরের মধ্যে থাকা খাবার খুঁজছিল। তার পর থেকে আর আতঙ্কে রাতে ঘুম আসছে না।’’
বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, ‘‘হাতিটিকে সব সময় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বন দফতরের বিশেষ দল ওই গ্রাম লাগোয়া এলাকায় মোতায়েন করা রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এড়িয়ে এবং গতিপ্রকৃতি বুঝে আমরা দ্রুত হাতিটিকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্তরা নিয়ম মেনে বন দফতরে আবেদন জানালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’