মরসুমের প্রথম ডার্বি। উন্মাদনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টিকিটের চাহিদা। সেই সঙ্গে ক্ষোভও! রবিবাসরীয় মহারণের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল ময়দানে। টিকিট না পেয়ে ক্ষোভে রাস্তা অবরোধ করলেন সবুজ-মেরুনের সমর্থকরা।
ডুরান্ড কাপের ডার্বিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৬০ হাজার দর্শককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২২ হাজার বিনামূল্যের টিকিট। বাকি ৩৮ হাজার টিকিট অনলাইন ও অফলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করার কথা। ডুরান্ড কাপ শুরুর আগেই অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অধিকাংশ শেষ হয়ে যায়। অবশিষ্ট টিকিট শুক্রবার মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল মাঠ থেকে দেওয়ার কথা জানানো হয়। সকাল থেকেই দুই প্রধানের তাঁবুর সামনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়।
শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে মোহনবাগান মাঠের কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল। সমর্থকদের কেউ এসেছেন বর্ধমান থেকে। কেউ আবার পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া বা কৃষ্ণনগর থেকে। বেলা দশটার মধ্যেই টিকিট কাটতে আসা মানুষের লাইন মোহনবাগান মাঠ থেকে বাবুঘাট পৌঁছে গিয়েছিল! বেলা বারোটা নাগাদ টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু ১০০টি টিকিট দেওয়ার পরেই কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মুহূর্তের মধ্যেই দাবানলের মতো ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার সমর্থকের মধ্যে। টিকিটের দাবিতে রাস্তা আটকে ইডেনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন সমর্থকরা। পুলিশ এসে বিক্ষোভ তুলে দেয়।
ডার্বির টিকিট কাটতে পুরুলিয়া থেকে এসেছিলেন মোহনবাগানের সমর্থক অসীম চক্রবর্তী। প্রবল গরমের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি তিনি। হতাশ হয়ে বললেন, ‘‘করোনার কারণে গত প্রায় তিন বছর কলকাতায় ডার্বি হয়নি। এ বার তাই সকলের মধ্যেই উন্মাদনা তুঙ্গে। ভোররাতে পুরুলিয়া থেকে ট্রেনে উঠে হাওড়া পৌঁছেছি। ভেবেছিলাম, টিকিট নিশ্চয়ই পেয়ে যাব। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টার উপরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। শুনলাম, মাত্র ১০০টা টিকিট দেওয়ার পরেই নাকি কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ আর এক সমর্থক বলছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম টিকিট কেটে অফিসে চলে যাব। তাই সকাল আটটার মধ্যে চলে এসেছিলাম মোহনবাগান মাঠে। টিকিটও পেলাম না, অফিস যাওয়াও হল না। জানি না শেষ পর্যন্ত ডার্বি দেখতে পারব কি না।’’মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘ডার্বির টিকিট না পাওয়া নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ যে দিন চলে যাবে, মনে করবেন মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। যুবভারতীতে ৬০ হাজারের বেশি দর্শক খেলা দেখতে পারবেন না। আমাদের অন্তত ছয় লক্ষ সমর্থক টিকিট চাইছেন। ফলে ক্ষোভ থাকবেই। ঐতিহ্যের এই দ্বৈরথটাই তো ভারতীয় ফুটবলের সম্পদ।’’
ইস্টবেঙ্গল মাঠেও প্রায় একই দৃশ্য। দুপুর দু’টো থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই ভিড় করেন সমর্থকরা। প্রথমে জানানো হয়েছিল কাউন্টার থেকে প্রত্যেককে দু’টি করে টিকিট দেওয়া হবে। পরিস্থিতি সামলাতে জন প্রতি একটি করেই টিকিট দেওয়া হয়। লাল-হলুদের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারের কথায়, ‘‘বিনামূল্যের টিকিট আর নেই। সবই কিনতে হবে। সদস্যদের জন্য আমরা ১৩ হাজার টিকিট চেয়েছিলাম। সীমিত সংখ্যার টিকিট যা পাওয়া গিয়েছে শনিবার আগে এলে আগে পাওয়ার ভিত্তিতে সদস্যদের দেওয়া হবে।’’ যোগ করলেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি দফতর, বর্তমান ও প্রাক্তন ফুটবলার, রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও আমাদের টিকিট দিতে হয়।’’
ডার্বি নিয়ে সমর্থকদের উন্মাদনার আবহেই রণকৌশল তৈরিতে ব্যস্ত জুয়ান ফেরান্দো ও স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন। এটিকে-মোহনবাগান কোচের চিন্তা রক্ষণ ও গোল করার ব্যর্থতা। ইস্টবেঙ্গল চাণক্যকে উদ্বেগে রাখছে সুহের ভি পি, সুমিত পাসিদের গোল নষ্টের প্রবণতা। শুক্রবার মোহনবাগান অনুশীলন করলেও ফুটবলারদের বিশ্রাম দিয়েছিলেন লাল-হলুদের কোচ। চব্বিশ ঘণ্টা আগে কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রাজস্থান ইউনাইটেড এফসির সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পরেই স্টিভন জানিয়েছিলেন, ফুটবলাররা বিশ্রামের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না।টানা ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। আজ, শনিবার দুই কোচই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মহমেডানের লক্ষ্য জয়: শনিবার কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভারতীয় বায়ু সেনার বিরুদ্ধে ড্র করলেই ‘এ’ গ্রুপ থেকে ১৩১তম ডুরান্ড কাপের শেষ আটে খেলা নিশ্চিত হয়ে যাবে মহমেডানের। কিন্তু কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ জেতা ছাড়া কিছুই ভাবতে চান না। সে ক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে হারলেও কোনও সমস্যা হবে না।
জামশেদপুরের জয়: এফসি গোয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৩১তম ডুরান্ড কাপে প্রথম জয় পেল জামশেদপুর এফসি। শুক্রবার যুবভারতীতে ম্যাচ শেষ হওয়ার ছয় মিনিট আগে জয়সূচক গোল করেন তপন হালদার।