তর্কাতর্কির পুনরাবৃত্তি চান না! ট্রাম্পের দাদাগিরি রুখতে জ়েলেনস্কির ঢাল হয়ে হোয়াইট হাউসে থাকছেন মেলোনিরা?

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। কিন্তু এ বার একা নয়, সঙ্গে থাকছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও। কিন্তু কেন? জল্পনা, গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের সঙ্গে জ়েলেনস্কির বৈঠকে ওভাল দফতরে যে চাপানউতর সৃষ্টি হয়েছিল, এ বার তা এড়াতেই সঙ্গে থাকছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। যদিও আমেরিকার প্রশাসন সেই জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছে। জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। সে কারণেই নেতাদের ‘আমন্ত্রণ’ জানানো হয়েছে।

ঠিক ছ’মাস আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। ক্যামেরার সামনেই তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখায় যায় ট্রাম্পকে। এর পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউস ছেড়ে বেরিয়ে যেতেও বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু ১৮ অগস্ট জ়েলেনস্কি আর একা হোয়াইট হাউস যাচ্ছেন না। সঙ্গে থাকছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। মনে করা হচ্ছে, আলাস্কায় ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পরে ইউক্রেনের স্বার্থ যাতে কোনও ভাবেই ধাক্কা না খায়, তা নিশ্চিত করাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের উদ্দেশ্য।

কেন হোয়াইট হাউসে জ়েলেনস্কি?

গত ১৫ অগস্ট আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। দু’জনেই বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক’ বললেও সাড়ে তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান অধরাই থেকেছে। তার পরেই জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন ট্রাম্প। এই বৈঠকের আগে সপ্তাহান্তে ব্রাসেলসে গিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডের লেয়েনের সঙ্গে বৈঠক করেন জ়েলেনস্কি। তার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে বৈঠক করেন। সেখানেই জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘আপনারা আমার সঙ্গে রয়েছেন এবং আমরা একত্রে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলছি, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ তিনি আরও জানান, ২০২২ সালে ইউরোপ যেমন ঐক্যমত ছিল, এখনও তা-ই রয়েছে। তাঁর মতে, এই ঐক্য প্রকৃত শান্তি আনতে সাহায্য করবে।

সঙ্গে কারা?

জ়েলেনস্কির সঙ্গে এ বার হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎজ়, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ফন ডের লেয়েন। এমনটাই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’। সূত্রের খবর, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, নেটোর সাধারণ সম্পাদক মার্ক রুটও উপস্থিত থাকবেন।

কেন জ়েলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা, রাষ্ট্রপুঞ্জে ফ্রান্সের সেনা অভিযানের প্রাক্তন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত ফরাসি জেনারেল দমিনিক ত্রঁকঁ ‘স্কাই নিউজ়’কে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওভাল অফিসের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কায় তাঁরা (ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা)। সে কারণে তাঁরা জ়েলেনস্কির পাশে থাকতে চান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা আসলে ক্ষমতার যুদ্ধ। এই ঐক্য হয়তো এ বার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে কাজে আসতে পারে।’’

মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্প যাতে পুতিনের পক্ষ নিয়ে জ়েলেনস্কিকে বেশি চাপ দিতে না পারেন, সে কারণেই তাঁর সঙ্গে থাকতে চান ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। এমনকি, ইউরোপের কূটনীতিকেরাও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে তাঁরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে ওভাল অফিসে যে ঘটনা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে কারণেই এ বার জ়েলেনস্কির সঙ্গী হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা।

প্রসঙ্গত, এর আগের বৈঠকে ট্রাম্প জ়েলেনস্কিকে রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ‘‘তোমার হাতে আর কোনও তাস নেই।’’ সম্প্রতি আলাস্কার বৈঠকের পরে ‘ফক্স নিউজ়’কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনকে বুঝতেই হবে যে, রাশিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকেরও আগেও তিনি জানান, রাশিয়ার কিছু শর্ত মেনে নেওয়া উচিত ইউক্রেনের। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জ়েলেনস্কি এখনই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে পারেন, যদি তিনি চান। নয়তো তিনি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।’’

আর ঠিক এই কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের আশঙ্কা, ওভাল অফিসে জ়েলেনস্কিকে চাপ দিয়ে রাশিয়ার শর্ত মানতে বাধ্য করাতে পারেন ট্রাম্প। নয়তো গত বারের মতো তাঁকে বেরিয়ে আসতে হতে পারে। মনে করা হচ্ছে, সে কারণেই তাঁরা জ়েলেনস্কির সঙ্গী হচ্ছেন। যদিও মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিয়ো এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সিএনবিসিকে বলেন, ‘‘জ়েলেনস্কিকে হেনস্থা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁরা এখানে আসছেন না। ওঁরা আসছেন, কারণ আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করছি। ওঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’

রুবিয়ো মুখে যা-ই বলুন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা যে জ়েলেনস্কির হেনস্থার পুনরাবৃত্তি রুখতেই সোমবার ওভাল অফিসে যাচ্ছেন, তা এক প্রকার স্পষ্ট। রাশিয়া ইউক্রেনের থেকে ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক চেয়েছে। এই নিয়ে কথা হতে পারে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও আদায় করতে পারেন তারা। রাশিয়ার উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়েও কথা হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.