নৈশ-পার্টিতে যাবেন না, ধর্ষণের শিকার হতে পারেন! পুলিশি ‘পৃষ্ঠপোষকতা’য় মহিলাদের সতর্কীকরণ পোস্টার অহমদাবাদে

ধর্ষণ বা গণধর্ষণের মতো ঘটনা এড়াতে মহিলাদের ঘরে বসে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে! অহমদাবাদ ট্রাফিক পুলিশের ‘পৃষ্ঠপোষকতা’য় এমন বেশ কিছু পোস্টার দেখা গিয়েছে গুজরাতের রাস্তায়। পোস্টারগুলি নজরে আসতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে গুজরাতে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে অহমদাবাদের ট্রাফিক পুলিশ ভূমিকা নিয়ে। গুজরাতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকে।

অহমদাবাদের সোলা এবং চাঁদলোদিয়া এলাকায় রাস্তার ডিভাইডারের উপর বেশ কিছু পোস্টার বসানো হয়েছে। গুজরাতি ভাষায় লেখা ওই পোস্টারগুলি ঘিরেই বিতর্ক। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, সেগুলির মধ্যে কোনওটিতে লেখা আছে, “বেশি রাতের কোনও পার্টিতে যাবেন না, আপনি ধর্ষণ বা গণধর্ষণের শিকার হতে পারেন।” আবার কোনওটিতে লেখা আছে, “আপনার বান্ধবীর সঙ্গে কোনও অন্ধকার শুনশান জায়গায় যাবেন না, যদি তাঁকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করা হয়?” যদিও বিতর্ক দানা বাঁধতেই পোস্টারগুলি রাস্তার উপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিতর্কিত এই পোস্টারগুলি ঘিরে অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসনও। অহমদাবাদের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক পশ্চিম) নীতা দেসাইয়ের বক্তব্য, ‘সতর্ক গ্রুপ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই পোস্টারগুলি তৈরি করেছে। ট্রাফিক পুলিশের অনুমতি না নিয়েই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পোস্টারগুলি ছাপিয়েছে বলে দাবি তাঁর। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জানান, পথসুরক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতায় একটি কর্মসূচির জন্য ওই সংগঠন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কেবলমাত্র পথসুরক্ষা সংক্রান্ত পোস্টারগুলিই ট্রাফিক পুলিশের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাপানো হয়েছে। নারীসুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচির জন্য নয়।

ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের কথায়, “ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা বলেছিল, স্কুল এবং কলেজগুলিতে পথসুরক্ষা সংক্রান্ত সচেতনতা কর্মসূচি আয়োজন করতে চায়। ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদেরও ওই কর্মসূচিতে যুক্ত করতে চায়। আমাদের যে পোস্টারগুলি দেখানো হয়েছিল, তা পথসুরক্ষা সংক্রান্ত। কিন্তু এই ধরনের কোনও বিতর্কিত পোস্টার আমাদের দেখানো হয়নি। আমাদের সম্মতি ছাড়াই ওই পোস্টারগুলি তৈরি করা হয়েছে।” বিতর্কিত ওই পোস্টারগুলি নজরে আসার পরেই সেগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিসিপি।

তবে পুলিশি ‘পৃষ্ঠপোষকতা’য় এমন বিতর্কিত পোস্টার ছড়ানোয় বিজেপি শাসিত গুজরাতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। আম আদমি পার্টির দাবি, এই পোস্টারগুলি সে রাজ্যে মহিলার নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিস্থিতিকেই তুলে ধরে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, “গুজরাতের বিজেপি সরকার নারী ক্ষমতায়নের কথা বলে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। গত তিন বছরে গুজরাতে সাড়ে ছ’হাজারেরও বেশি ধর্ষণ এবং ৩৬ টিরও বেশি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছ। প্রতিদিন পাঁচটিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.