ছন্নছাড়া ফুটবল সুনীলদের, এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র ভারতের

আর একটু হলেই হেরে মাঠ ছাড়তে হত ভারতকে। ম্যাচের শেষ দিকে গোলের নীচে বিশাল কাইথের হাত না থাকলে মুখ পুড়ত সুনীল ছেত্রীদের। বিশাল মান বাঁচালেন ভারতের। শিলংয়ের যে মাঠে মলদ্বীপকে কয়েক দিন আগে ভারত হারিয়েছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতকে চেনা গেল না। ফিফা ক্রমতালিকায় অনেক নীচে থাকা বাংলাদেশের (১৮৫) বিরুদ্ধে কোনও রকমে ড্র করল ভারত (১২৬)। গোটা ম্যাচে ছন্নছাড়া ফুটবল খেলল তারা। যে কয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল তা নষ্ট করলেন সুনীল, ফারুখ চৌধরীরা। এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে প্রথম ম্যাচ ড্র করল ভারত। ঘরের মাঠে পয়েন্ট নষ্ট করতে হল মানোলো মার্কেজ়ের ছেলেদের।

খেলার শুরু থেকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে ভারত ঘরের মাঠে খেলছে। বেশি চাপে দেখাচ্ছিল তাদের। খেলা শুরুর এক মিনিটের মাথায় ভুল করে ফেলেছিলেন গোলরক্ষক বিশাল। সতীর্থকে পাস দিতে গিয়ে ভুল করে বাংলাদেশের জনি হোসেনের পায়ে বল দিয়ে দেন তিনি। জনি সরাসরি গোল লক্ষ্য করে শট মারেন। একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হন তিনি।

ভারতের মাঝমাঠ খেলা ধরার চেষ্টা করলেও পারছিল না। বাংলাদেশের ফুটবলারেরা শারীরিক দক্ষতায় টেক্কা দিচ্ছিলেন। ফলে একসঙ্গে চার, পাঁচটি পাস খেলতে পারছিলেন না আপুইয়া, লিস্টন কোলাসোরা। তুলনায় ছোট ছোট পাসে ভাল আক্রমণ তুলে আনছিল বাংলাদেশ। ১২ মিনিটের মাথায় আবার ভুল করেন বিশাল। এ বার শট মারতে গিয়ে প্রতিপক্ষ ফুটবলারের গায়ে মারেন তিনি। ফিরতি বল বক্সের মধ্যে পান রিদয়। বিশাল আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি শুভাশিস বসু। রিদয়ের শট গোললাইন থেকে বাঁচান তিনি।

বাংলাদেশের দলে খেলছিলেন হামজা চৌধুরী। প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফুটবলারকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের কোচ। ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার সুনীল ছেত্রীকে আটকানোর দায়িত্ব ছিল তাঁর। সেই কাজটা প্রথমার্ধে ভাল ভাবে করেন হামজা। ফাঁকা জায়গায় বল পাননি সুনীল। তিনি আটকে যাওয়ায় ভারতের গোলের সুযোগও কম হচ্ছিল। তার মধ্যেই ৩০ মিনিটের মাথায় লিস্টনের ক্রস থেকে ভাল হেড করেন উদান্তা সিংহ। সেই হেড প্রতিহত হলেও ফিরতি বল পান ফারুখ। কিন্তু গোল করতে পারেননি তিনি। ফারুখকে দেখে মনে হল, তিনি তৈরিই ছিলেন না। মলদ্বীপ ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন তিনি।

প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভাল সুযোগ পায় ৪১ মিনিটের মাথায়। হামজার ক্রস ধরে বক্সে ঢোকেন জনি। পরিস্থিতি বাঁচান বিশাল। এ বার কোনও ভুল করেননি তিনি। একটি টোকা একটু বড় নিয়েছিলেন জনি। সেই সুযোগে গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল বার করেন তিনি। প্রথমার্ধে আর কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি দু’দল। গোলশূন্য বিরতিতে যায় তারা।

দ্বিতীয়ার্ধে ভারতকে একটু বেশি চনমনে দেখায়। কোচ মানোলো জানতেন, ঘরের মাঠে জিততে না পারলে পরের পর্বে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। মাঝ বরাবর নয়, দুই প্রান্ত ধরে বেশি আক্রমণ হচ্ছিল। লিস্টন, উদান্তাদের অনেক বেশি বল পায়ে দেখা যাচ্ছিল। দুই প্রান্ত ধরে বার বার বল ভেসে আসায় সুনীলও সুযোগ পাচ্ছিলেন। এক বার লিস্টনের ক্রস ও এক বার কর্নার থেকে জোড়া সুযোগ পান সুনীল। প্রথম বার বল মাথায় লাগাতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয় বার সুনীলের শট বার উঁচিয়ে বেরিয়ে যায়।

যত সময় গড়াচ্ছিল, তত খেলার উত্তাপ বাড়ছিল। মাঝে মাঝে খারাপ ট্যাকল করছিলেন দু’দলের ফুটবলারেরা। ফলে খেলার ছন্দ নষ্ট হচ্ছিল। ভারতের হয়ে সবচেয়ে ভাল খেললেন শুভাশিস। রক্ষণের পাশাপাশি আক্রমণেও সমান ভূমিকা পালন করলেন। তাঁর একটি শট একটুর জন্য বেরিয়ে যায়। একটি কর্নার থেকে হেডও করেছিলেন শুভাশিস। সেটিও অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দেশের জার্সিতে প্রথম গোল করা হল না মোহনবাগানের আইএসএল লিগ-শিল্ডজয়ী অধিনায়কের।

গোল করার জন্য সুরেশ, মহেশ, ব্রাইসনদের নামিয়ে দেন কোচ মানোলো। আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াচ্ছিল ভারত। সুযোগও এসে গিয়েছিল। ৮৩ মিনিটের মাথায় বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় বল পান সুনীল। শুধু গোলে বল রাখতে হত। কিন্তু তাঁর হেড বাইরে বেরিয়ে যায়। হতাশ হয়ে মাঠে বসে পড়েন সুনীল। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, দলকে জেতানোর সবচেয়ে সহজ সুযোগটা নষ্ট করে ফেলেছেন। তার পরেই সুনীলকে তুলে নেন কোচ। তরতাজা ফুটবলার নামান তিনি। সংযুক্তি সময়ে চাপে পড়ে ভারতের রক্ষণ। আর একটু হলেই হেরে মাঠ ছাড়তে হত ভারতকে। ম্যাচের শেষ দিকে গোলের নীচে বিশালের হাত না থাকলে মুখ পুড়ত সুনীলদের। বিশাল মান বাঁচালেন ভারতের। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হল খেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.