প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সার্বিক অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে এবং লিঙ্গ সমতা স্থাপনের উদ্দেশ্যে, ৮ মার্চ দিনটি সারা বিশ্বে বিশ্ব নারীদিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়। সেই উপলক্ষ্যে ৭ মার্চ, মোহনপুরে বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনটি অত্যন্ত সমারোহে পালিত হলো। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক (ডঃ) অশোক কুমার পাত্র ও অন্যান্য আধিকারীকরা।
অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা শিক্ষিকারা, সহযোগিতায় ছিলেন মহিলা শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব নারী দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডঃ বনজুল ভট্টাচার্য স্বাগত ভাষণ দেন ও উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানান। এরপর মাননীয় উপাচার্য তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন বৃত্তে সফল তিনজন কৃতী নারীকে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। সফল বিজ্ঞানী হিসেবে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়, ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের এসটিকিউসি সেলের বিজ্ঞানী ইঞ্জিনিয়ার অর্পিতা দত্তকে। সফল মহিলা উদ্যোগপতি হিসাবে আমন্ত্রিত ছিলেন সোমা চক্রবর্তী। তিনি আইআরআরআই- এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলী, এইসব কৃষিপ্রধান জেলায় আদিবাসী ও অন্যান্য মহিলাদের নিয়ে সেল্ফ হেল্প গ্রুপ তৈরি করে, ধান, আলু ইত্যাদির বীজ সরবরাহ করে থাকেন। সম্প্রতি, সিআইএফআরআই- এর সঙ্গে তিনি মাছের মিন সরবরাহের কাজটিও শুরু করেছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডঃ সোমা দাস, তিনি বর্তমানে ভারত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের অধীনে ভারতের বন জরিপ, পূর্ব অঞ্চলের আঞ্চলিক অধিকর্তা। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকাবৃন্দ ও ছাত্রীরা দিনটির সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ অত্যন্ত মনোগ্রাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এই দিনটি পালনের মধ্যে দিয়ে আগামী দিনগুলোতে নারীর সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রতিটি শিক্ষিত মানুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য আহ্বান জানানো হয়।
ড: বনজুল ভট্টাচার্য বললেন, আজ মেয়েরা ঘরে বাইরে সব জায়গায় উন্নতি সাধন করেছে। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা, বিশ্ববিদ্যলয়ের বিভিন্ন বিভাগের মহিলা শিক্ষিকা কর্মীরা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মিলে এই দিনটি উদযাপন করছি এবং কয়েকজন সফল মহিলা যারা কার্যক্ষেত্রে অত্যন্ত সফল এবং সমাজকে একটা নতুন দিশায় নিয়ে যাচ্ছেন তাদের সম্মান প্রদান করছি। বর্তমানে সমাজে মেয়েদের সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে মেয়েরাই অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করবে। সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বাড়িঘরে, বিদ্যালয়ে ও বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষিকাদের এগিয়ে আসতে হবে। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত শিক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। কৃষিশিক্ষাতে আজ নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ মেয়ে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সফল নারী চাষির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। পুরুষরা নারীদের পাশে দাঁড়ালে আগামী দিনে নারীরা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে যাবে।