ধোনির বিকল্প উইকেটরক্ষক হিসাবে সঞ্জুকে চায় চেন্নাই, কাজে লাগাবে আইপিএলের ‘ট্রেডিং উইন্ডো’, কী এই জানালা? খোলা-বন্ধ হয় কখন?

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কত দিন আইপিএল খেলবেন? দু’বছর ধরে সেই জল্পনা চললেও সদুত্তর নেই। ধোনি নিজেও ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখেছেন। ধোনি নিজে না চাইলে চেন্নাই সুপার কিংস কর্তারা তাঁকে অবসর নিতে বলবেন বলে কেউই মনে করছেন না। তবু ভবিষ্যতের কথা ভেবেই বিকল্পের কথা ভাবতে হচ্ছে চেন্নাই কর্তাদের।

৪৩ বছরের ধোনিকে নিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা করা কঠিন। হাঁটুতে চোট রয়েছে। টানা ২০ ওভার ওঠবস করে উইকেটরক্ষা করা কঠিন। বয়সের কারণে খানিকটা মন্থরও হয়েছেন। কমেছে ব্যাট হাতে দাপট। স্বভাবতই তাঁর ‘ওয়ার্কলোড’ কমানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। তবু ধোনি এবং চেন্নাই এখনও সমার্থক। যে কারণে রবীন্দ্র জাডেজা বা রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে অধিনায়ক করেও ভিন্ন ভিন্ন কারণ দেখিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে অধিনায়ক ধোনিকে। অথচ দলের ভবিষ্যতের কারণেই তাঁর বিকল্প প্রয়োজন। চেন্নাইয়ের নজরে রয়েছেন রাজস্থান রয়্যালসের অধিনায়ক তথা উইকেটরক্ষক সঞ্জু স্যামসন। এবং তাঁর জন্য আইপিএলের নিলাম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছেন না চেন্নাই কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু নিলামের আগে কোন নিয়মে সঞ্জুকে নেবে চেন্নাই? জবাব হল, আইপিএলের ‘ট্রেডিং উইন্ডো’ কাজে লাগিয়ে। এখন খোলা রয়েছে আইপিএলের ট্রেডিং উইন্ডো। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ২০২৪ সালের আইপিএলের আগে গুজরাত টাইটান্সের কাছ থেকে হার্দিক পাণ্ড্যকে কিনে নিয়েছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।

Picture of Hardik Pandya

ট্রেডিং উইন্ডো কী?

আইপিএলের অন্য দল থেকে ক্রিকেটার নিতে পারে যে কোনও দল। নিজেদের কোনও ক্রিকেটারের বদলে নতুন ক্রিকেটার নেওয়া যেতে পারে। অথবা সরাসরি টাকা দিয়েও অন্য দল থেকে ক্রিকেটার কেনা যেতে পারে। নিলামে বেশি টাকা পকেটে নিয়ে যেতে চাইলে দলগুলি কোনও ক্রিকেটারকে ছেড়েও দিতে পারে ট্রেডিং উইন্ডোর মাধ্যমে। এর জন্য নিলাম পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার হয় না। প্রয়োজনমতো দল গুছিয়ে নিতে পারলে নিলামের টেবিলে হাসিখুশি এবং স্বস্তিতে থাকার সুযোগ পেতে পারেন চেন্নাই সুপার কিংসের সিইও কাশী বিশ্বনাথন বা কলকাতা নাইট রাইডার্সের সিইও বেঙ্কি মাইসোর।

আইপিএলের নিলাম।

২০২৬ সালের আইপিএলের জন্য ট্রেডিং উইন্ডো কবে খুলেছে?

ট্রেডিং উইন্ডো খোলে দু’দফায়। নিলামের আগে এক বার এবং পরে এক বার। প্রত্যেক বছর আইপিএল ফাইনালের সাত দিন পর খুলে যায় ট্রেডিং উইন্ডো। ২০২৫ সালের আইপিএলের ফাইনাল হয়েছে গত ৩ জুন। অর্থাৎ, ১০ জুন থেকে খুলে গিয়েছে প্রথম দফার ট্রেডিং উইন্ডো। তা বন্ধ হবে আগামী নিলামের সাত দিন আগে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এ বছরের নিলামের দিন ঘোষণা করলে ঠিক হবে, কবে পর্যন্ত খোলা থাকবে প্রথম দফার ওই ট্রেডিং উইন্ডো। দ্বিতীয় দফায় ট্রেডিং উইন্ডো খুলবে নিলাম শেষ হওয়ার পর দিন থেকে। বন্ধ হবে আগামী আইপিএল শুরু হওয়ার ৩০ দিন আগে।

কী ভাবে ক্রিকেটার কেনাবেচা হয়?

সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সম্মতি ছাড়া তাঁকে কর্তৃপক্ষ বিক্রি করতে বা ছেড়ে দিতে পারবেন না। ট্রেডিং উইন্ডোয় সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সম্মতি বাধ্যতামূলক। এই সময়ে সরাসরি টাকা খরচ করে আইপিএলের অন্য দল থেকে পছন্দের ক্রিকেটারকে কিনে নেওয়া যায়। যে দল থেকে কেনা হবে, তাদেরও সম্মতি থাকতে হয়। সব পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে দু’টি দল নিজেদের মধ্যে ক্রিকেটার অদলবদল করতে পারে। বিদেশি ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সম্মতিও প্রয়োজন হয়। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল গত আইপিএলে পঞ্জাব কিংসের হয়ে সাফল্য পাননি। ৭টি ম্যাচে ৪৮ রান করেছিলেন। উইকেট পেয়েছিলেন ৪টি। তাঁকে ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় কিনেছিলেন পঞ্জাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁকে ছেড়ে দিতে হলে বা অন্য দলের কাছে বিক্রি করতে হলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সম্মতি প্রয়োজন।

Picture of Glenn Maxwell

কত জন ক্রিকেটার কেনা যায়?

যত খুশি ক্রিকেটার নেওয়ার সুযোগ নেই। কোনও দলেই ১৮ জনের কম ক্রিকেটার রাখা যায় না। অন্য দিকে, কোনও অবস্থাতেই ২৫ জনের বেশি ক্রিকেটারও রাখা যায় না। এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় দলগুলিকে। ক্রিকেটার কেনা বা অদলবদল করার জন্য অনুমোদিত টাকার অঙ্ক রয়েছে। তার বেশি খরচও করা যায় না। যেমন ২০২৬ সালের আইপিএলে দলগুলি ক্রিকেটারদের বেতন খাতে সর্বোচ্চ ১৫১ কোটি টাকা (সম্ভবত) খরচ করতে পারবে। অর্থাৎ, ট্রেডিং উইন্ডোয় টাকা দিয়ে ক্রিকেটার কিনলেও খরচের মোট অঙ্ক খেয়াল রাখতে হয়। উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কথা। তাদের সব ক্রিকেটারের সম্মিলিত দাম ১১৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। গত নিলামের হিসাবে তাদের হাতে উদ্বৃত্ত রয়েছে ২০ লাখ টাকা। তিলক বর্মাকে ছেড়ে দিলে মুম্বইয়ের হাতে বাড়তি ৮ কোটি টাকা থাকবে। তাঁর পরিবর্তে কাউকে নিলে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা খরচ করতে পারবে মুম্বই। এই টাকায় সর্বোচ্চ তিন জন ক্রিকেটার নিতে পারবেন মুম্বই কর্তৃপক্ষ। কারণ তিলককে ছেড়ে দিলে দলে ক্রিকেটারের সংখ্যা হবে ২২। প্রসঙ্গত, এক জন ক্রিকেটার নিলামে যে দাম পেয়েছিলেন, সেই দাম দিয়েই তাঁকে কিনতে হয় নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজ়িকে।

এই ব্যবস্থা কতটা লাভজনক?

কোনও ক্রিকেটারকে ছেড়ে দিলে তাঁর দামের সম পরিমাণ টাকা বেশি নিয়ে নিলামে যেতে পারে দলগুলি। কোনও ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক না হলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে। যেমন গত আইপিএলে ব্যর্থ বেঙ্কটেশ আয়ারকে (সহ-অধিনায়ককে সব ম্যাচে মাঠেই নামানো যায়নি) ছেড়ে দিলে কলকাতা নাইট রাইডার্স কর্তৃপক্ষের হাতে ২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত থাকবে নিলামের সময়। গত বারের হিসাব অনুযায়ী, কেকেআর কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। বেঙ্কটেশকে ছেড়ে দিলে কেকেআর আগামী নিলামে ২৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা খরচ করে অন্তত পাঁচ জন ক্রিকেটারকে কিনতে পারবে। আবার চোট-আঘাতের জন্য কোনও ক্রিকেটারকে পাওয়া না গেলে তাঁর পরিবর্ত নেওয়া যায়। দলের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করে পরের মরসুমের জন্য অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করা যায়।

বেঙ্কটেশ আয়ার।

ট্রেডিং উইন্ডোয় কোন কোন দল সক্রিয়?

চেন্নাই কর্তৃপক্ষ কথা শুরু করেছেন রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে। সঞ্জুকে চায় চেন্নাই। পরিবর্তে রুতুরাজকে দিয়ে দিতে পারেন তাঁরা। গত নিলামের আগে সঞ্জু এবং রুতুরাজ— দুই ক্রিকেটারকেই তাঁদের দল ধরে রেখেছিল ১৮ কোটি টাকা দিয়ে। তাই এই দুই ক্রিকেটারকে অদলবদল করলে কোনও দলকেই আলাদা করে টাকা খরচ করতে হবে না। নিউ জ়িল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ডেভন কনওয়ের পারফরম্যান্সেও খুশি নন সিএসকে কর্তৃপক্ষ। গত আইপিএলে তিনি করেছেন ১৫৬ রান। তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইছে সিএসকে। আবার কনওয়েকে পেতে আগ্রহী গুজরাত। তারা আবার ওয়াশিংটন সুন্দর এবং রাহুল তেওয়াটিয়াকে রাখতে চাইছে না। কনওয়েকে গুজরাতে পাঠিয়ে ওয়াশিংটন এবং তেওয়াটিয়াকে দলে নিতে পারে চেন্নাই। তবে দুই ভারতীয় ক্রিকেটারের মিলিত দামের চেয়ে কনওয়ের দাম কম। ফলে গুজরাতকে কিছু টাকাও দিতে হবে চেন্নাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.