আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। ফলে ব্যাহত হয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। এমন পরিস্থিতিতে ৪২ জন চিকিৎসকের বদলির নির্দেশ আপতত বাতিল করল স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। একই সঙ্গে তিনি এ-ও জানান, এই বদলির নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ নেই। এটা ছিল রুটিনমাফিক। মাস দুই আগেই এই বদলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘‘যে বদলির কথা বলা হচ্ছে, সেই বদলির প্রক্রিয়া আরজি করের ৯ অগস্টের ঘটনার প্রায় দু’মাস আগে থেকে শুরু হয়েছিল। এমনকি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বদলির নির্দেশে ছাড়পত্র অনেক আগেই দিয়েছিলেন। কিন্তু নামের বানান থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংশোধনের কাজ মিটিয়ে বদলির অর্ডার ইস্যু করতে দেরি হল। তবে আমরা সেই নির্দেশও প্রত্যাহার করছি।’’
কেন এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হল, তা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্যসচিব জানান, ওই চিকিৎসকেরা এখন বিভিন্ন জায়গায় পরিষেবা দিচ্ছেন। তাঁদের বদলি করলে পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। তাই বদলির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হল। এতে কোনও বিতর্ক নেই। বদলির নির্দেশ আপতত বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কয়েক দিনের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান নারায়ণস্বরূপ।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাজ্য স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই বদলির নির্দেশ প্রকাশ করেছিল। সরকারি বিধি মেনে সেই বিজ্ঞপ্তিতে ‘রাজ্যপালের ইচ্ছায় দায়িত্ব’ দেওয়ার বার্তাও ছিল। কিন্তু এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। বিজেপির অভিযোগ, ওই চিকিৎসকেরা আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের এই ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ’। বাংলায় চিকিৎসক বদলি নিয়ে শনিবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। ৪৩ চিকিৎসকের বদলিকে ‘শাস্তিমূলক পদক্ষেপ’ও বলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুণেওয়ালা।
অন্য দিকে, চিকিৎসক সংগঠন ‘ইউনাইটেড ডক্টর্স ফ্রন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে বদলির প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এক্স পোস্টে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘বাংলার রাজ্যপাল আমাদের প্রতিবাদ সমর্থনকারী সদস্যদের অন্যায় ভাবে বদলি করেছেন। এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপ কিন্তু ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার জন্য আমাদের দাবি স্তব্ধ করতে পারবে না। আমরা আমাদের লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’’ প্রতিবাদে সরব হয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অফ হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্সও। এই প্রতিবাদের মাঝেই সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানাল স্বাস্থ্য দফতর।