‘মিথ্যে বলছে সিবিআই’! আরজি করে নির্যাতিতার বাবা-মা ‘হতাশ’, তাঁদের আইনজীবীর সওয়াল কী?

সুপ্রিম কোর্টে আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলার শুনানি নিয়ে ‘হতাশ’ নির্যাতিতার বাবা-মা। শুধু তা-ই নয়, সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তাঁরা। নির্যাতিতার বাবার দাবি, আদালতে দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলছে সিবিআই। শীর্ষ আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী মার্চ মাসে। তা নিয়েও ক্ষুব্ধ নির্যাতিতার বাবা-মা।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে আরজি করের ওই মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রধান বিচারপতিই জানতে চান, কত দিনে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে? সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা আদালতে জানান, দ্রুতই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে। এমনকি, নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারও জানান, নিম্ন আদালতে প্রায় প্রতি দিন বিচারপ্রক্রিয়ার শুনানি হচ্ছে। শীর্ষ আদালত আগেই এই মামলার শুনানিতে সিবিআইকে বলেছিল, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের অভিযোগ, সিবিআই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে না। নির্যাতিতার বাবার কথায়, ‘‘আদালতে দাঁড়িয়ে এ ভাবে মিথ্যা বলা যায়, তা আমরা জানতাম না। সেই মিথ্যার উপর সুপ্রিম কোর্ট নজরদারি চালাচ্ছে। সিবিআই আদালতে বলছে, তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু আমরা কিছুই জানতে পারি না।’’

শিয়ালদহ আদালতে সিবিআইয়ের চার্জশিট জমা দেওয়া নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্যাতিতার বাবা। তাঁর দাবি, ‘‘সিবিআই বলেছিল আমাদের জানিয়ে শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট জমা করবে তারা। কিন্তু পরে দেখলাম, আমাদের না-জানিয়েই তারা চার্জশিট জমা দিয়ে দিয়েছে।’’ আরজি কর মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিট কবে জমা দেবে সিবিআই, তা নিয়েও তাঁরা ধোঁয়াশায় আছেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা।

‘হতাশ’ নির্যাতিতার মা-ও। তিনি বলেন, ‘‘আজও আমরা জানতে পারলাম না, কেন আমাদের মেয়েকে খুন হতে হল?’’ তবে সিবিআইয়ের কাজে হতাশ হলেও, তাদের উপর আস্থা হারাচ্ছেন না নির্যাতিতার বাবা-মা। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আইনজীবী বৃন্দা বলেন, ‘‘দ্রুত বিচার চাইছেন নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁরা আশা করছেন, এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত থাকলে তা খুঁজে বার করবে সিবিআই।’’

সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৭ মার্চ। অর্থাৎ প্রায় তিন মাস পর আবার এই মামলা শুনবে শীর্ষ আদালত। তবে প্রধান বিচারপতি জানান, শিয়ালদহ আদালতে যদি কোনও কারণে বিচারপ্রক্রিয়া দেরি হয়, তবে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। প্রয়োজনে পরবর্তী শুনানির আগেই সেই বিষয়টি শুনবেন তিনি। তিন মাস পর শুনানির দিন পড়ায় ‘হতাশ’ নির্যাতিতার বাবা-মা। তাঁর বাবার কথায়, ‘‘বিচারব্যবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশায় আছি। এত পরে কেন সময় দিল সুপ্রিম কোর্ট?’’ তবে তাঁরা এ-ও জানান, আইনের উপরই ভরসা রাখবেন। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা আইনের পথেই নিতে হবে। এ ছাড়া অন্য কারও উপর ভরসা করতে রাজি নন তাঁরা।

মঙ্গলবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি প্রথমেই জানতে চান, নিম্ন আদালতে মামলা কী অবস্থায় রয়েছে? সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই তা শেষ হবে। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীও বলেন, ‘‘ছুটির দিন ছাড়া প্রতি দিনই নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। এখনও পর্যন্ত ৫১ জনের মধ্যে ৪৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। সিবিআই আশা করছে আগামী সপ্তাহের আগে ট্রায়াল শেষ হয়ে যাবে। আশা করছি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেবে সিবিআই।’’ সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও মঙ্গলবার শুনানির সময় তাঁদের আইনজীবী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ওই সংস্থাকে নিয়ে কোনও হতাশা প্রকাশ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.