দাড়ি রাখায় ‘জঙ্গি’ সম্বোধন: ডাক্তার, অধ্যাপকদের সচেতন করতে পাঁচ দফা পদক্ষেপের ভাবনা কলকাতা মেডিক্যালে

দাড়ি রাখায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে এক ইন্টার্নকে ‘জঙ্গি’ বলে সম্বোধন করেছিলেন এক অধ্যাপক। বিতর্কের মাঝে সেই ঘটনায় হাসপাতালের তরফে যে অনুসন্ধান কমিটি (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি) তৈরি করা হয়েছিল, কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে চলেছে তারা। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত অধ্যাপক এবং অভিযোগকারী ছাত্র— উভয়ের সঙ্গেই কথা বলেছে কমিটি। অধ্যাপক আগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করে নিয়েছে। তবে আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের সুপারের নেতৃত্বে গঠিত ওই অনুসন্ধান কমিটি কয়েক দফা পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে চলেছে কর্তৃপক্ষকে। ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, লিঙ্গ, পোশাক-পরিচ্ছদ— কোনও কিছুর ভিত্তিতেই যাতে ভবিষ্যতে মেডিক্যাল কলেজে কেউ বৈষম্যের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করার জন্য এই প্রস্তাবগুলি দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী বিবেচনা করে পদক্ষেপ করবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে অনুসন্ধান কমিটির ভাবনায় অন্তত পাঁচ দফা প্রস্তাব রয়েছে—

প্রথমত, মেডিক্যাল কলেজের সমস্ত বিভাগের প্রধানদের জন্য একটি নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিতে চায় অনুসন্ধান কমিটি। কেউ যাতে কারও প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য না করেন, কারও হাবভাব, শব্দচয়নে যাতে বৈষম্যমূলক কিছু না থাকে, কারও কথায় বা আচরণে যাতে মনে মনে কেউ আঘাত না-পান, বিভাগীয় প্রধানদেরই তা নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে কারও আচরণে বা কথাবার্তায় যদি কারও খারাপ লাগে, তা ছাত্র সংসদে জানানো এবং সেখান থেকে অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা করতে হবে।

তৃতীয়ত, বৈষম্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি ওয়ার্কশপের ভাবনা রয়েছে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের। এই ওয়ার্কশপে ছাত্র, শিক্ষক সকলেই যোগ দিতে পারবেন। বৈষম্য কী, কখন কোন মন্তব্যে কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, কী ধরনের আচরণ আপত্তিকর, তা বোঝানো হবে ওয়ার্কশপে। হাসপাতালের ভিতরের কেউ এই ওয়ার্কশপ করাতে পারেন, বাইরে থেকেও কাউকে আনা হতে পারে। ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ছাত্রদের চরিত্রগঠনের কাজটিও করে ফেলতে আগ্রহী কমিটি। কেউ যাতে অতি সংবেদনশীল না-হয়ে পড়েন, ছোটখাটো বিষয়কে যাতে অহেতুক গুরুত্ব না-দিয়ে ফেলেন, তা-ও বোঝানো হবে এই ওয়ার্কশপে।

চতুর্থত, হাসপাতালের অধ্যাপকদের জন্য একটি এসওপি বা গাইডলাইন তৈরি করার প্রস্তাব অধ্যক্ষকে দিতে চলেছে অনুসন্ধান কমিটি। অধ্যাপকেরা ক্লাসে সেই গাইডলাইন মেনে চলবেন।

পঞ্চমত, বৈষম্য নিয়ে সচেতনতার প্রসারের জন্য মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহারের প্রস্তাব দিতে পারে কমিটি। রাস্তাঘাটে ট্র্যাফিক সচেতনতার জন্য যেমন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ব্যবহারের ভাবনা রয়েছে। শুধু ছাত্র বা অধ্যাপকেরাই নন, হাসপাতালের রোগীরাও যাতে বৈষম্যের শিকার না-হন, তা নিশ্চিত করতে চায় কমিটি। কী চিহ্ন এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়, তাতে কী লেখা থাকতে পারে সে বিষয়ে ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপকদের মতামত চাওয়া হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.