অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একা লড়ে গেলেন বুমরা! স্মিথ-হেডের ২৪১ রানের জুটি ভেঙে ম্যাচে ফেরালেন ভারতকে

অ্যাডিলেডে শতরান করা সেই ট্রেভিস হেড শতরান করলেন ব্রিসবেনেও। একই সঙ্গে রানে ফিরলেন স্টিভ স্মিথও। দুই ব্যাটারের দাপট তৃতীয় টেস্টেও সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিল অস্ট্রেলিয়াকে। দ্বিতীয় দিনের শুরুটা যদিও ছিল ভারতের পক্ষে। দুই ওপেনার উসমান খোয়াজা (২১) এবং নাথান ম্যাকসুইনিকে (৯) দ্রুত আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। পরে তিনিই আবার পর পর ৩ উইকেট নিয়ে কোণঠাসা রোহিত শর্মাদের লড়াইয়ে ফেরালেন। ব্রিসবেনে দ্বিতীয় দিনের লড়াই কার্যত বুমরা বনাম অস্ট্রেলিয়ায় পরিণত হল। তবু দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসের রান ৭ উইকেটে ৪০৫।

কথায় বলে সকাল দেখেই দিনের বাকিটা বোঝা যায়। রবিবার ব্রিসবেনের সকালের সঙ্গে দিনের বাকিটা মিলল না। প্রথম ২ ঘণ্টায় রোহিতেরা দাপট দেখালেও দিনের বাকি সময়টা শাসন করল স্মিথ-হেড জুটি। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম টেস্টেই ব্যাটিং অর্ডারে নিজের পছন্দের জায়গা ফিরে পেয়েছিলেন স্মিথ। ব্রিসবেনে রানও পেলেন। ৭৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যাওয়া দলের ইনিংস টেনে তুললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক। চাপের সময় ধরে খেললেও হেড আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করার পর সুযোগ বুঝে হাত খুললেন স্মিথও।

স্মিথ-হেড জুটি ২২ গজে থিতু হয়ে যাওয়ার পর দিশেহারা দেখাল ভারতীয় বোলারদের। বুমরাও বোধহয় খানিকটা চাপে পড়ে গেলেন উইকেটের অন্য প্রান্ত থেকে তেমন সাহায্য না পেয়ে। বাংলার জোরে বোলার আকাশ দীপ কিছুটা চেষ্টা করলেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটারদের চাপে রাখার। মহম্মদ সিরাজ, নীতীশ কুমার রেড্ডিরা চাপ ধরে রাখতে পারলেন না। নীতীশ অবশ্য শুরুটা খারাপ করেননি। মার্নাস লাবুশেনের (১২) উইকেট নিয়েও চাপ ধরে রাখতে পারলেন না। রবীন্দ্র জাডেজাকে বিপজ্জনক দেখাল না। প্রতি টেস্টে ভারতের স্পিনিং অলরাউন্ডার পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। গৌতম গম্ভীরেরা কাউকেই অস্ট্রেলিয়ার পিচে থিতু হতে দিচ্ছেন না। পার্‌থে সফল ওয়াশিংটন সুন্দরকে বসিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে অ্যাডিলেডে খেলানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ব্রিসবেনে তাঁকে বসিয়ে খেলানো হল জাডেজাকে। তিনিও বল হাতে দলকে ভরসা দিতে পারলেন না।

সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার। দু’জনেই শতরান করলেন। হেড টানা দু’টেস্টে শতরান করলেন। স্মিথের ৩৩তম টেস্ট শতরান এল ২৬ ইনিংস পর। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের জুটি এক রকম কোণঠাসা করে দিল ভারতীয় দলকে। ওভার প্রতি প্রায় পাঁচ রান করে তুললেন তাঁরা। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের ২৪১ রানের জুটি চাপে ফেলে দিল ভারতকে। পর পর স্মিথ (১০১) মিচেল মার্শ (৫) এবং হেডকে (১৫২) আউট করে ভারতকে লড়াইয়ে ফেরাতে হল সেই বুমরাকেই। ভারতীয় দলের সহ-অধিনায়কের দাপটে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে ৩১৬ থেকে ২৩ বলের ব্যবধানে ৩২৭ রানে ৬ উইকেট হারায়। ভারতের অন্য বোলারেরা কেন এই দায়িত্ব নিতে পারছেন না, সে প্রশ্ন উঠছে বার বার। এ নিয়ে গোপালি বলের টেস্টের পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রোহিতও। তাতেও পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। এই দল থেকে বুমরাকে সরিয়ে নিলেই ভারতীয় বোলিং নির্বিষ। দিশাহীন। বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সময় হয়ে গিয়েছে।

বুমরা দ্রুত ৩ উইকেট নিয়ে দলকে লড়াইয়ে ফেরানোর পরও ভারতের অন্য বোলারেরা চাপে রাখতে পারেননি অস্ট্রেলীয়দের। নতুন জুটি তৈরি করলেন অ্যালেক্স ক্যারে এবং প্যাট কামিন্স। তাঁরাও ব্যাট করলেন স্বচ্ছন্দে। শেষবেলায় কামিন্সকে (২০) আউট করে মুখরক্ষা করলেন সিরাজ। দিনের শেষে ২২ গজে অপরাজিত রয়েছেন ক্যারে (৪৫) এবং মিচেল স্টার্ক (৭)। ৭২ রানে ৫ উইকেট বুমরার। এ ছাড়া ৬৫ রানে ১ উইকেটে নীতীশের। ৯৭ রানে ১ উইকেট সিরাজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.