আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবিকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরিবারের এমনটাই অভিযোগ সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)-এর বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা সোনালিকে তাঁর পরিবার-সহ দিল্লি পুলিশ গত ২৬ জুন বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। স্বামী দানিশ শেখ ও আট বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই তাঁকে সীমান্তের ও পারে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ। সোনালির পরিবার এখন প্রশ্ন তুলছে—বাংলাদেশে যদি তাঁদের মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তবে সেই নবজাতকের নাগরিকত্ব কী হবে?
দিল্লিতে প্রায় দুই দশক ধরে সোনালি ও তাঁর পরিবার কাগজকুড়ুনি এবং গৃহ- পরিচারিকার কাজ করে আসছেন। গত জুন মাসে আটক হওয়ার পর প্রথমে দিল্লি আদালতে মামলা করলেও পরে সেটি তুলে নেওয়া হয়। পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের সাহায্যে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন পরিবারের সদস্যেরা। সোনালির পরিবারের এক সদস্যের প্রশ্ন, “আমাদের শেষ ভরসা আদালত। সোনালি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। বাংলাদেশে ও কী ভাবে আছে, ওষুধ বা খাবার পাচ্ছে কি না— আমরা কিছুই জানি না। ওখানে যদি সন্তান হয়, তবে সে কি বাংলাদেশি নাগরিক হবে?”
তবে রাজ্যসভার সাংসদ তথা পরিযায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান সমিরুল ইসলাম বলেন, “যে দিন থেকে খবর পেয়েছি, পরিবারের পাশে আছি। ও আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তাই খুব উদ্বেগজনক অবস্থা। আমরা আদালতের দিকে তাকিয়ে আছি। যত দিন না সুস্থ অবস্থায় সোনালি ও তার পরিবারকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনছি, তত দিন লড়াই চলবে।” মামলার আইনজীবী সুপ্রতীক শ্যামল বলেন, “কলকাতা হাই কোর্ট দিল্লি সরকারকে সমস্ত নথি জমা দিতে বলেছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ অগস্ট।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশের মতো বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এমনই অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল। এমনকি সেই সব রাজ্যে আক্রান্ত হয়ে পরিযায়ী শ্রমিকেরা বাংলায় ফিরে এসেছেন বলেও দাবি করেছে তারা। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে ভিন্রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য শ্রমশ্রী প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিকেরা যত দিন না বিকল্প কাজের বন্দোবস্ত করছেন, তত দিন পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশে ‘পুশব্যাক’ করে দেওয়া বাংলার বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গত সপ্তাহেই মালদহের কালিয়াচকের এক পরিযায়ী শ্রমিককে বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরানো হয়েছে। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা সোনালিকে দেশে ফেরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ রাজ্য সরকারের কাছে।