কর্মসূচিতে অভিনবত্ব। তাই কৌতূহল জিইয়ে রাখছে রাজ্য বিজেপি। আগামী রবিবার, ১ জুন কলকাতায় জোড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম নেতা অমিত শাহের। কিন্তু নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সাংগঠনিক জমায়েত ছাড়া অন্য কর্মসূচি কী, তা এখনও বিশদে জানানো হচ্ছে না রাজ্য নেতৃত্বের তরফে। শুধু বলা হচ্ছে, একটি ‘ধর্মীয় কর্মসূচি’তে যোগ দিতে পারেন শাহ। সেটি আয়োজিত হতে পারে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটেয়। কিন্তু সে কর্মসূচির উদ্দেশ্য কী, কারা থাকবেন, কী আলোচন হবে, সে সব প্রশ্নের সবিস্তার জবাব আপাতত এড়িয়েই যাচ্ছে রাজ্য বিজেপি।
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে মণ্ডল, জেলা এবং রাজ্য স্তরের নেতৃত্বকে ডেকে পাঠানো হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মণ্ডলের সংখ্যা প্রায় ১,৩০০। সব মণ্ডলেই সাংগঠনিক নির্বাচন পর্ব সারা। কোথাও কোথাও পুরনো মণ্ডল সভাপতিই নিজের পদে বহাল থেকেছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পরে নতুন সাধারণ সম্পাদক, নতুন কমিটিও গঠিত হয়েছে অনেক মণ্ডলে। যে সব মণ্ডলে কমিটি গঠন হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নেতাজি ইন্ডোরের জমায়েতে ডাক পাচ্ছেন। যে সব এলাকায় নতুন কমিটি এখনও হয়নি, সেখান থেকে শুধু মণ্ডল সভাপতিরা ডাক পাচ্ছেন। আর জেলা এবং রাজ্য স্তরের সব পদাধিকারীকেই ডাকা হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে। ইন্ডোরের ওই কর্মিসভায় শাহ যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করার বার্তা দিয়ে যাবেন, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপির প্রায় কোনও মহলেই তেমন সংশয় নেই। নির্বাচনী রণকৌশল সম্পর্কে শাহের কোনও ‘বিশেষ’ বার্তা থাকে কি না, তা জানার জন্যই রাজ্য বিজেপি অপেক্ষায়।
তবে কৌতূহল বাড়ছে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটায় প্রস্তাবিত কর্মসূচি ঘিরে। রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ওই কর্মসূচি আয়োজনের সামগ্রিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি কর্মসূচির বিশদ বিবরণ সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বিশদে কিছু জানাচ্ছেন না। তবে বিজেপির অন্য একটি সূত্র বলছে, ১ জুন স্বামীজির জন্মভিটেয় সাধু-সন্তদের নিয়ে কর্মসূচি আয়োজিত হবে। সে কর্মসূচিতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বও শাহের সঙ্গে থাকবেন। তবে সাধারণ জনতার জন্য এই কর্মসূচির দরজা খোলা থাকছে না। বিভিন্ন হিন্দু মঠ, মিশন এবং আধ্যাত্মিক সংগঠনের সাধুসন্তদের সঙ্গেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলাপচারিতার বন্দোবস্ত হতে চলেছে বলে বিজেপি সূত্রে আভাস মিলছে।
নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জেপি নড্ডা-সহ বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে আধ্যাত্মিক কর্মসূচি বা পূজার্চনায় অংশ নিয়ে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট হোক বা বেলুড়মঠ, ভারত সেবাশ্রম, মতুয়া ঠাকুরবাড়ি— নানা তীর্থস্থানে তাঁদের আনাগোনা দেখা যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বঙ্গসফরের কার্যসূচিতে আলাদা করে শুধুমাত্র সাধুসন্তদের আমন্ত্রণ জানিয়ে কোনও অনুষ্ঠান সাম্প্রতিক অতীতে হয়েছে বলে বিজেপি নেতারা মনে করতে পারছেন না। উত্তর কলকাতার বিধান সরণিতে স্বামীজির জন্মভিটেয় শাহ অবশ্য আগেও গিয়েছেন। স্বামীজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন পরিচালিত সংগ্রহশালা ঘুরে দেখেছেন। কিন্তু সেখানে এ বার বিভিন্ন সংগঠনের সাধুসন্তদের ডেকে যে ভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা ভাবা হয়েছে, তা অভিনব।
স্বামীজির ভিটের অনুষ্ঠানে শাহের সঙ্গে সাধু সমাজের আলাপচারিতা হবে, নাকি শাহ সাধুদের কথা শুনবেন, তা স্পষ্ট নয়। অনুষ্ঠানের রূপরেখা সম্পর্কে এখনও বিজেপির মুখে কুলুপ। তবে পশ্চিমবঙ্গের সাধু সমাজের একাংশকে নানা সামাজিক এবং রাজনৈতিক ঘটনার প্রেক্ষিতে গত কয়েক বছরে একাধিক বার পথে নামতে দেখা গিয়েছে। রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তাঁদের সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে। উল্টো দিকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও কোনও কোনও ধর্মীয় সংগঠন তথা সে সংগঠনের নেতৃত্বের সমালোচনা শোনা গিয়েছে। তাই সাধুসন্তদের জমায়েতে শাহের উপস্থিতির উপরে রাজ্যের উৎসাহীদের নজর থাকবে।