শরীরের তাপমাত্রা বলে দেবে অবসাদ বাড়ছে কি না, কেন বলছেন চিকিৎসকেরা?

মানসিক অবসাদের সঙ্গে কি শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক আছে? বিজ্ঞান বলছে, আছে। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা বহু বছরের। সম্প্রতি সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির কয়েকজন চিকিৎসক দাবি করেছেন যে, মানসিক অবসাদ বাড়লে শরীরের তাপমাত্রাও নাকি বাড়তে থাকে। ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্ট’ বিজ্ঞানপত্রিকায় এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে।

গবেষণায় কী দেখা গিয়েছে?

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১০৬টি দেশে এই সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে সমীক্ষাটি শুরু হয়। প্রায় ২০ হাজার জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষকে নিয়ে সমীক্ষা চালান চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, যাঁদের উপর সমীক্ষা চালানো হয়, তাঁদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এক দলের মানসিক অবসাদ আগে থেকেই ছিল। বাকিদের ছিল না। প্রত্যেককে বিশেষ রকম একটি যন্ত্র পরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরে তাঁদের শরীরের তাপমাত্রার ওঠানামা পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায়, যাঁদের অবসাদ ছিলই এবং চিকিৎসাও চলছিল, তাঁদের বিশেষ বিশেষ সময়ে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে মানসিক উত্তেজনা, ‘প্যানিক অ্যাটাক’ বা হঠাৎ করেই কোনও কারণে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা তৈরি হলে তাপমাত্রা বেড়েছে। বাকিদের তেমন কোনও বদল হয়নি।

অবসাদের সঙ্গে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার কী সম্পর্ক?

এই বিষয়ে মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিলা সরকারের বক্তব্য, “মানসিক স্থিতি এবং হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে তখন শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করতে পারে। গভীর মানসিক অবসাদে রয়েছেন, এমন মানুষজন বা যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরেই মানসিক রোগের চিকিৎসা করাচ্ছেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখলে বিষয়টি বোঝা যাবে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই সেই সব রোগীরা প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় ভোগেন। রাতে ঘুমোতে পারেন না। এমনকি মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ায়, তাঁরা অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার সমস্যাতেও ভুগতে শুরু করেন।”

শর্মিলার কথায়, স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া, হরমোনের ক্ষরণ যদি ঠিকঠাক থাকে, তা হলে কোনও সমস্যা হয় না। কিন্তু, প্রচণ্ড মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করলে নানা রকম বদল আসতে থাকে শরীরে। অনিদ্রা, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, ওজন বাড়া তো আছেই, স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দেয়। ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। তখন কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দেখা দেয়। কর্টিসল প্রভাব ফেলতে পারে স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও। স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ অনিয়মিত হয়ে গেলে হৃৎস্পন্দনের হার বাড়তে পারে। তেমনই অতিরিক্ত অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ ও রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। এই সবই শরীরের তাপমাত্রা আচমকা বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। তবে, এই নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.