ভাদ্রের আগেই নয়া রাজ্য কমিটি চূড়ান্ত করতে চায় বিজেপি, বঙ্গ নেতৃত্বকে নিয়ে রাজধানীতে ঘণ্টাদেড়েক বৈঠক শাহের

বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে ঘণ্টাদেড়েক বৈঠক করলেন অমিত শাহ। রবিবার বিজেপি সূত্র জানিয়েছিল, বাংলার বিজেপি সাংসদেরা বৈঠকে বসবেন শাহের সঙ্গে। তবে সোমবার সংসদে নিজের দফতরে শাহ শেষ পর্যন্ত বৈঠক করলেন রাজ্য বিজেপির চার শীর্ষনেতার সঙ্গে। বৈঠকে ছিলেন তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকও। কী নিয়ে বৈঠক হল, সে বিষয়ে বঙ্গ বিজেপি মুখে প্রায় কুলুপ এঁটেছে। রাজ্য সভাপতি শমীক শুধু বলেছেন, ‘‘সাংগঠনিক বিষয়েই আলোচনা ছিল। একেবারেই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’ বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, নতুন রাজ্য কমিটির চেহারা কেমন হতে চলেছে, সামনের সারির পদাধিকারী কারা হচ্ছেন, তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে।

বিজেপি যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডেই দিনক্ষণ বা তিথিনক্ষত্র বিচারে বিশ্বাসী। বাংলা দিনপঞ্জি অনুযায়ী এখন চলছে শ্রাবণ মাস। মহাদেবের জন্মমাস হিসেবে এই সময়টা হিন্দু মতে শুভ। আবার শ্রাবণ কাটলেই যে মাস আসছে, সেই ভাদ্রে অনেক শুভ কাজই হিন্দু রীতি অনুযায়ী মুলতুবি রাখা হয়। তাই রাজ্য বিজেপি নতুন সভাপতি পাওয়ার পরে নতুন রাজ্য কমিটি গঠন তথা পদাধিকারী বাছাইয়ের ‘শুভকাজ’ বিজেপি নেতৃত্ব শ্রাবণেই সেরে ফেলতে চাইছেন বলে দলের রাজ্য দফতর সূত্রের খবর। বিধানসভা নির্বাচন ক্রমশ কাছে আসছে। ফলে নতুন রাজ্য কমিটি গঠনের কাজ বেশি দিন ঝুলিয়ে রাখা বঙ্গ বিজেপির পক্ষে কঠিন। শ্রাবণ কেটে গেলে আবার আশ্বিন আসার অপেক্ষা করতে হতে পারে। তাই চলতি বাংলা মাসেই জেলা কমিটি এবং রাজ্য কমিটি ঘোষণা করে দিতে বিজেপি নেতৃত্ব তৎপর।

শাহের সঙ্গে বৈঠকে সোমবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ছাড়াও হাজির ছিলেন প্রাক্তন সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সতীশ ঢোন্ড। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে এবং সহকারী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ও বৈঠকে ছিলেন। বিকেল ৫টা নাগাদ বৈঠক শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। শমীকের কথা অনুযায়ী, শুধু ‘সাংগঠনিক বিষয়ে’ কথা হয়েছে শাহের সঙ্গে। সে ক্ষেত্রে বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক-সহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলিতে কারা থাকবেন, তা নিয়েই যে মূলত কথা হয়েছে, সে বিষয়ে রাজ্য বিজেপির প্রায় কোনও সূত্রেরই সংশয় নেই।

বিজেপি সূত্রের খবর, সামনে বিধানসভা নির্বাচন থাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের আপাতত অন্য সব গুরুদায়িত্ব থেকে নেতৃত্ব মুক্ত রাখতে চাইছেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির বিদায়ী কমিটিতে যে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন সাংসদ, দু’জন বিধায়ক। যিনি সাংসদ, তিনি বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন না। কিন্তু দুই বিধায়কই আসন্ন নির্বাচনে লড়বেন। বাকি দু’জন গত বিধানসভাতেও লড়েছিলেন। এ বারও টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই সম্ভাব্য চার প্রার্থীকে নতুন কমিটির গুরুদায়িত্ব থেকে মুক্ত রাখা হতে পারে কি না, তা নিয়ে দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। তবে কমিটিতে ‘কাজের লোক’দের রাখার উপরে জোর দেওয়া হলে তাঁদের প্রত্যেকের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গে ভোটযোদ্ধাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত রাখার নীতিতে অটল থাকা যাবে কি না, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতামত জরুরি ছিল। তিন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং বঙ্গের চার শীর্ষনেতাকে একসঙ্গে ডেকে নিয়ে শাহ সে বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও নীতি নির্ধারণ করে দিয়ে থাকতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রে আভাস মিলছে।

দিল্লির এই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, শুভেন্দু অসুস্থ থাকায় দিল্লি যেতে পারেননি। রবিবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে শমীক বলেছিলেন, ‘‘আরজি করে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। আগামী ৯ অগস্ট একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন তাঁরা। সেই বিষয়ে আমাদের জানাতে এসেছিলেন এবং আরও কিছু বলেন। সেই সব কথা শাহকে জানানো হবে।’’ ফলে সোমবারের বৈঠকে শাহের সামনে আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সাম্প্রতিকতম বক্তব্যও তুলে ধরা হয়ে থাকতে পারে। এসআইআর এবং ‘বাংলাভাষী হেনস্থা’-সহ একাধিক সাম্প্রতিক বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কেমন, শাহকে তারও আভাস দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.