ভোটার তালিকা সংশোধনে নতুন পথে বিজেপি, সব জেলায় লোকসভা-প্রস্তুতির বিশেষ নির্দেশ সুকান্তদের

লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিল বিজেপি। দলের নেতা, কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে নামাতে চায় গেরুয়া শিবির। সেই মর্মে সব জেলাকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।

গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ঠিক মতো হয়নি। আশানুরূপ ফল না হওয়ায় ভোটের পরে দলীয় বিশ্লেষণে এই খামতির কথা উঠে এসেছিল। তাই এ বার লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে অনেক আগে থেকেই সেই কাজ শুরু করে দিতে চায় গেরুয়া শিবির। সে জন্য জেলা স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও চাইছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কী ভাবে প্রশিক্ষণ এবং ফলিত স্তরে ঠিক কেমন ভাবে কাজ করতে হবে তার লিখিত নির্দেশও ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তবে দলের যা সাংগঠনিক অবস্থা, তাতে এই কাজ কতটা করা যাবে তা নিয়ে চিন্তা রয়েছে দলের নেতাদের মধ্যেই। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা স্তরের নেতা বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে, অতীতে এই ভাবে প্রশিক্ষণ বা চিঠি দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ করতে বলা হয়নি। ঠিক ভাবে করতে হলে সংগঠনে যত লোক দরকার, তা সব জায়গায় নেই। যদিও একটা সুবিধা রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রায় গোটা বছরই ভোটার তালিকা সংশোধন করা যায়।’’

শুভেন্দু অধিকারী গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময়ে দলের একটি বৈঠকে ভোটার তালিকা সংশোধনে নেতা-কর্মীদের উদ্যোগ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তখন আর সেই সময় ছিল না। লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই সময় থাকতে থাকতেই সেই কাজে নামতে চাইছে বিজেপি। দলের কর্মীরা সে ভাবে এই কাজ যে জানেন না, তা ধরে নিয়ে প্রথমে প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। এ নিয়ে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ রয়েছে সেটাও জানানো হয়েছে জেলা সভাপতিদের। বলা হয়েছে, সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় সংযোজন, বিয়োজন এবং সংশোধনের বিষয়টি বুথ স্তরে গুরুত্ব দিতে হবে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে রাজ্য থেকে জেলা এবং বিধানসভা স্তরে এর জন্য কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কাজে সাংসদ, বিধায়ক ছাড়াও সব স্তরের জনপ্রতিনিধিকে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।

ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিষয় দেখতে হয়। প্রথমত, বর্তমান ভোটার তালিকা ধরে ধরে কারা মৃত, তাঁদের নাম শনাক্ত করে তা বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। এর পরে সেই এলাকায় এ বার যাঁরা নতুন ভোটার হলেন তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হয়। দেখার পরে নতুন ভোটারদের নাম নথিভূক্ত করাতে হয়। এ ছাড়াও পরিযায়ী শ্রমিকরা কোথাকার ভোটার এবং কোথায় স্থায়ী ভাবে রয়েছেন সেটা দেখে সংশোধন করা দরকার। কোনও এলাকায় নতুন ভাড়াটে এলে সেই পরিবারের সাবালক সদস্যদের নাম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করতে হয়। এই সব কাজের জন্য মজবুত সংগঠনের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দরকার। সেটা বুঝেই বিজেপি এগোতে চাইছে। বলা হয়েছে, কমিটি তৈরি করে প্রতিটি নতুন আবাসনের বাসিন্দাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কি না তা যাচাইয়ের কাজও এখন থেকেই শুরু করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.