BJP, Media, সামাজিক মাধ্যমের কর্মকান্ড ঢেলে সাজানোর কথার পাল্টা ঘোষণা বিজেপি-র

পশ্চিমবঙ্গে দলের সামাজিক মাধ্যমের কর্মকান্ড ঢেলে সাজানোর কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হবে সেই কর্মকান্ড। বৃহস্পতিবার খবরটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৈঠকে বসল বিজেপি-র সংশ্লিষ্ট শাখা। তারপর সামাজিক মাধ্যমের কর্মশালা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের শাখাপ্রধান সপ্তর্ষি চৌধুরী।

সপ্তর্ষিবাবু জানান, আজ রাজ্য বিজেপি সল্টলেক কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার কনভেনার ও কো-কনভেনারদের নিয়ে তাঁদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

সপ্তর্ষিবাবুর কথার ভিত্তিতে বিজেপি-র প্রচার শাখা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লিখেছে, “এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল— পশ্চিমবঙ্গে আমাদের কীভাবে আরও সংগঠিত, শক্তিশালী এবং জনমুখী করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করা। আজ পশ্চিমবঙ্গ এক বিশেষ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ্যের মানুষের সামনে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরা এখন সময়ের দাবি।

বর্তমানে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে কিছু মানুষ মিথ্যা প্রচার চালিয়ে বলছেন যে, “মাফিন কেক খাওয়া হয়েছে,” অথচ আসল সত্য হলো—মানুষকে “মরফিন” খাইয়ে ব্যথা কমিয়ে বাস্তব থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই প্রচারের মোকাবিলা করতেই আমরা চাই, সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে, সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে এবং বাংলার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে।

এই লক্ষ্যেই আমাদের আজকের কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়, অমিত মালব্য এবং অমিতাভ চক্রবর্তী মহাশয়ের উপস্থিতিতে। এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি ফেসবুক, ইউটিউব, X (টুইটার), ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কীভাবে আরও কার্যকরভাবে কাজ করা যায়।

আমাদের মূল লক্ষ্য, প্রতিটি কর্মীকে এই মাধ্যমে আরও সক্রিয়, আত্মবিশ্বাসী এবং দায়িত্বশীল করে তোলা। আমি সচেতনভাবেই বলছি “কর্মী,” কারণ ভারতীয় জনতা পার্টির যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কোনও বাইরের পেশাদার নয়; তাঁরা আমাদের দলেরই কর্মী। এই কর্মীরাই আমাদের শক্তি, তাই তাঁদের আরও সংঘবদ্ধ, দক্ষ ও উদ্বুদ্ধ করাই আজকের এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য।

কর্মশালায় আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে— সামাজিক মাধ্যমে যাঁরা সক্রিয়, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক হয়রানি ও রাজনৈতিক চাপ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের অনেক কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের হচ্ছে—কখনও লালবাজারে, কখনও সাইবার ক্রাইম বিভাগে, কখনও বা স্থানীয় থানায় নোটিশ পাঠিয়ে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা- কর্মীরা আমাদের সামাজিক মাধ্যমের যোদ্ধাদের ওপর নানা রকম হুমকি ও অত্যাচার চালাচ্ছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য আমরা একটি নতুন কৌশল তৈরি করেছি—যাতে আমাদের প্রত্যেক কর্মী নিজেদের নিরাপদ রাখার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে নির্ভয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

এছাড়াও, আমরা লক্ষ্য করেছি—অন্য এক রাজনৈতিক দল নিজেদের “বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা” বলে প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রকৃত ডিজিটাল যোদ্ধা তাঁরা, যাঁরা বাংলার মানুষের জন্য, বাংলার ভবিষ্যতের জন্য লড়ছেন। আমরা চাই না পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাক।

পশ্চিমবঙ্গ তার নিজস্ব গৌরব ও আত্মপরিচয় নিয়ে এগিয়ে যাক—এটাই আমাদের লক্ষ্য। তাই আমরা আহ্বান জানাচ্ছি সেইসব মানুষদের, যাঁরা দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন—যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্যায়ভাবে চাকরি হারিয়েছেন, যাঁরা মাসের পর মাস রাস্তায় আন্দোলন করছেন, যাঁদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে দেওয়া হয়েছে—তাঁরা হোন এই সত্য লড়াইয়ের প্রকৃত যোদ্ধা। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতা, বেদনা ও প্রতিবাদ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করুন—আমরা তাঁদের পাশে আছি।

আমরা আরও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের এই আন্দোলন শুধুমাত্র যুদ্ধ নয়—এটা মানুষের আত্মমর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই। যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে সত্য কথা বলছেন, যাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে সৎভাবে মত প্রকাশ করছেন, তাঁদের ওপর যে পুলিশ ও প্রশাসনের চাপ তৈরি করা হচ্ছে, সেটির অবসান এখন জরুরি। মানুষ মুক্তি চায়, সত্য চায়, সাহস চায়।

আমাদের বার্তা স্পষ্ট—২০২৬ সালের নির্বাচনই হবে তৃণমূলের বিসর্জন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নতুন আশা, নতুন নেতৃত্ব ও নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে। আমাদের স্লোগান—“ছাব্বিশের নির্বাচন, তৃণমূলের বিসর্জন”—এবং “বাঁচতে চাই বিজেপি তাই।” এই বিশ্বাস, এই উদ্দীপনাকেই সামনে রেখে আমরা সামাজিক মাধ্যমে আরও সংগঠিতভাবে, আরও জোরালোভাবে আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.