সীমান্ত পেরিয়ে ‘মেয়েদের রাতদখল’ এ বার পৌঁছে গেল অস্ট্রেলিয়ায়। কলকাতার আরজি করের ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে পথে নামলেন মেলবোর্ন শহরের মেয়েরাও।
শনিবার মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কোয়ারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলবোর্নে ‘মেয়েদের রাতদখল’ কর্মসূচির অন্যতম আহ্বায়ক ঋজুতা দে জানাচ্ছেন, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ছিল সকলকে প্রতিবাদের মঞ্চে জায়গা করে দেওয়া। তাঁদের প্রথম দাবি, কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ঘরে-বাইরে সর্বত্র মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় দাবিটি ছিল, আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীর শাস্তি। তিনি আরও বলেন, ‘‘এই সময় সকলকে মৃতার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে, এক যোগে তাঁদের হয়ে সুবিচারের দাবি তুলতে হবে।’’
কর্মসূচির আর এক আহ্বায়ক সৌভিক লাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতার এই ঘটনায় আমি বাঙালি হিসাবে ভীষণ লজ্জিত। এই ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত, তাদের সকলের শাস্তি চাই। আমরা চাই, মহিলারা যেন তাঁদের কাজের জায়গায় সুরক্ষিত বোধ করেন। কেবল আগামী কয়েকটা দিনের জন্য নয়, সব সময়ের জন্য তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই দাবি নিয়েই আমি প্রতিবাদসভায় অংশ নিচ্ছি।’’
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আর এক প্রবাসী ভারতীয় গণেশ কুঞ্জপারম। তিনি জানাচ্ছেন, কলকাতাতেই জন্ম তাঁর। নিজেও আরজি করেরই ছাত্র ছিলেন, চেস্ট মেডিসিন বিভাগেও কাজ করেছেন হাউস স্টাফ হিসাবে। নিজের প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় তিনি মর্মাহত। গণেশের দাবি, ‘‘বিচার চাই। শুধু এক জনের জন্য তো বটেই, সবার জন্য।’’
শহরে থাকা বহু প্রবাসী ভারতীয় শনিবারের এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে পথে নেমেছেন তাঁরা। ছিলেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। শিশুসন্তানদের নিয়েও এসেছিলেন কেউ কেউ। রাস্তায় বসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডে দোষীদের শাস্তি এবং কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বুধবার মধ্যরাতে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথে নেমেছিলেন মেয়েরা। ক্রমে, একই ঢঙে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের শহরগুলিতে। শুক্রবার পথে নামেন বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরাও। এ বার সেই মেয়েদের ‘রাতদখলের’ ডাক পৌঁছে গেল সুদূর অস্ট্রেলিয়াতেও।
মিউনিখেও প্রবাসী ভারতীয়দের একাংশ শহরের পূর্বে থিয়েট্রনে একটি পার্কে আরজি করের ঘটনার প্রতিকার চেয়ে শান্তিপূর্ণ জমায়েত করেন। তাঁরা ভারতীয় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টায় সেখানে জমায়েত করেন। যাদবপুর, শ্যামবাজার শিলিগুড়িতে যখন রাত জেগেছেন প্রতিবাদীরা তাঁদের প্রতি সংহতি জানাতে একই সময় প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন মিউনিখবাসী অনাবাসী ভারতীয়েরা।
বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনেও। লন্ডনের বাইরে ম্যানচেস্টারের সেন্ট পিটার্সবার্গে আগামী ২২ অগস্ট সেখানকার প্রবাসীরা আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে অবস্থান জমায়েত করবেন।