বয়স ২৫। সময়-সুযোগ পেলে জাদুঘরে ঘুরতে যান। পছন্দের বিষয় ইতিহাস। শিল্প এবং স্থাপত্য নিয়েও আগ্রহ রয়েছে। খেলেন ক্রিকেট। ব্যাট করতে নামার আগে হেডফোনে মার্গসঙ্গীত শোনেন!
তিনি শুভমন গিল। ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক।
অধিনায়ক শুভমন কেমন? রঞ্জি ট্রফিতে খুব বেশি ম্যাচে পঞ্জাবকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পাননি। আইপিএলে গত মরসুম থেকে তিনি গুজরাত টাইটান্সের অধিনায়ক। আগের বার অধিনায়ক হিসাবে তেমন সাফল্য পাননি। এ বার অনেক পরিণত। তাঁর নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই প্লে অফে উঠে গিয়েছে গুজরাত। কী ভাবে এল এই বদল? শুভমন বলেছেন, ‘‘গত বার আমি প্রথম অধিনায়ক হয়েছিলাম। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে বুঝতে পারি, একটা বড় ভুল করে ফেলেছি। ব্যাট করার সময়েও মনে মনে ক্যাপ্টেন থেকে যাচ্ছি। কিন্তু তখন আর ওটা শুধরোতে পারিনি। এ বার প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম, ব্যাট করার সময় ভুলে যাব আমি ক্যাপ্টেন। ফলে অনেক চাপমুক্ত হয়ে ব্যাট করতে পেরেছি।’’
আর বাকিটা? দৃশ্যতই শান্ত শুভমন আম্পায়ারদের কোনও সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে গেলে ছুটে গিয়ে তর্ক জুড়েছেন। প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আবার সতীর্থদের কেউ ভুল করলেও মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করেছেন। একটা বা দুটো ম্যাচ হারলেই দলে পরিবর্তন করে বসেননি। বলেছেন, ‘‘এটা বড় দায়িত্ব। শুধু নিজে পারফর্ম করলেই হয় না। দলের সকলের সেরাটা বের করে আনতে হয়। সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ।’’
পাঁচ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। লেখাপড়ায় মনোযোগ ছিল, এমন দাবি করেন না (নিজেই বলেছেন, স্কুলে পারতপক্ষে যেতেন না। স্কুলের শেষ তিন বছরে তাঁর উপস্থিতির হার ছিল ১২ শতাংশ! কখন যেতেন? যখন ক্রিকেট খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন)। তখন থেকেই ঠিক করে ফেলেছিলেন, ক্রিকেটই তাঁর জীবনের ধ্যানজ্ঞান হবে। পঞ্জাবী হয়েও আলুর পরোটা ছুঁতেন না। মা অনুযোগ করতেন। কিন্তু তিনি অনড়। তবে সে প্রতিজ্ঞা ভেঙে গিয়েছিল ‘কহো না প্যার হ্যায়’ দেখে। প্রিয় অভিনেতা হৃতিক রোশন। তিনি ওই ছবিতে গপগপিয়ে আলুর পরোটা খেয়েছিলেন। মা যা পারেননি, সেটা পেরেছিলেন বলিউডের সুঠাম নায়ক। সেই প্রথম শুভমন আলুর পরোটা চেখে দেখেন। শুধু চেখেছিলেন। অভ্যাস করে ফেলেননি। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে আরও বেশি ফিটনেস সচেতন হয়েছেন। ট্রেনিং বাদ দেন না। নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া মুখে তোলেন না। নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন কঠোর শৃঙ্খলায়। যা করেন, ফাঁক রাখেন না। হোমওয়ার্কে বিশ্বাস করেন। টেস্টে নেতৃত্ব নেওয়ার আগেও দিল্লিতে গৌতম গম্ভীরের বাড়িতে গিয়ে স্পষ্ট জেনেবুঝে এসেছেন, তাঁর কাছ থেকে কোচ ঠিক কী চান।
ফ্যাশন সম্পর্কে বাড়াবাড়ি সচেতন। সম্প্রতি একটি পডকাস্টে বলেছেন, বিজ্ঞাপনের শুটিং করার আগে গুগ্ল করেন। ইনস্টাগ্রামে দেখে নেন, খ্যাতনামী অভিনেতারা কী ভাবে ‘পোজ়’ দেন। একটা সময় পর্যন্ত স্নিকার্স বা ঘড়ি পছন্দ হলেই কিনে ফেলতেন। গত চার-পাঁচ বছর ধরে সে অভ্যাস ত্যাগ করেছেন। সময় পেলে সপ্তাহে এক দিন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ় দেখেন। সময় পেলে। কারণ, কোনও ছবি শুরু করে মাঝপথে ছাড়ার বান্দা নন তিনি। ফলে শুরুর আগে মেপে নেন, পুরোটা দেখার মতো সময় আছে তো?
তিনি কি ‘সিঙ্গল’?
আপাতত ‘সিঙ্গল’। অন্তত গত তিন বছর ধরে। তাঁর সঙ্গে যাঁদের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা হয়েছে, তাঁদের অনেকের সঙ্গে তাঁর কখনও মুখোমুখি দেখাও হয়নি। তা হলে কে তাঁর কাছের? ‘কে’ নয়, ‘কারা’। চার-পাঁচ জন ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ আছেন শুভমনের। তাঁরাই তাঁর জীবনের ‘সাপোর্ট সিস্টেম’। টেস্টে ভারতের নবীনতম অধিনায়ক বলছেন, ‘‘ওরা একজনও সঙ্গে না থাকলে আমার বিষন্ন লাগে। মনমরা লাগে। ওদের মধ্যে দু’তিন জন সবসময় আমার সঙ্গে থাকে। আমার সঙ্গে বিভিন্ন শহরে যায়। ম্যাচ বা প্র্যাকটিসের অবসরে ওদের সঙ্গে তাস খেলি। প্লে স্টেশনে সময় কাটাই। না খেয়ে বা না ঘুমিয়ে থাকতে পারি। কিন্তু ওদের ছেড়ে থাকতে পারব না।’
২০২২ সালের শেষে বাংলাদেশ সফর সেরে দেশে ফেরার পথে বিমানে বসে এক টুকরো কাগজে লিখেছিলেন ২০২৩ সালের লক্ষ্য— দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি করা, পরিবারকে খুশি রাখা, বিশ্বকাপ জেতা এবং সব সময় নিজে সেরাটা দেওয়া। নিজেকে লেখা সেই চিরকুট ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছিলেন তিনি। ২০২৫ সালে এসে শান্ত স্বরে বলেন, ‘‘বিশ্বকাপ জেতা ছাড়া সবক’টাই করতে পেরেছিলাম। বিশ্বকাপেও লক্ষ্যে খুব কাছে গিয়েছিলাম। আমরাই প্রতিযোগিতার সেরা দল ছিলাম। ওই একটা ম্যাচ জেতা হল না!’’
২০২৪ সালের শেষে ২০২৫ সালের লক্ষ্য স্থির করতে গিয়ে কি ভারতের টেস্ট অধিনায়কত্বের কথা ভেবেছিলেন? কৌতূহল রয়ে গেল।