সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের নির্দেশের পর গাড়িতে নীল-লালবাতি লাগানোর উপর রাশ টেনেছিল নবান্ন। কারা কারা লালবাতির গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন, বা কাদের গাড়িতে নীলবাতি লাগানোর অধিকার আছে, তার তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই তালিকায় নেই বিডিওদের কথা। তার পরও গাড়িতে নীলবাতি লাগানোর অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমানের কয়েক জন বিডিওর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, নিজেদেরকে ‘ভিআইপি’ জাহির করতেই নীলবাতির গাড়িতে ঘুরছেন তাঁরা! তা দেখেও চুপ পুলিশ-প্রশাসন। ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়তেই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক।
লাল-নীল বাতির গাড়ির অপব্যবহার নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মতই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট। তার পরই এ হেন গাড়ির ব্যবহারে রাশ টানতে কড়া পদক্ষেপ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কারা কার এ ধরনের গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করে দেয় নবান্ন। সেই নির্দেশিকায় রাজ্যের কোনও বিডিওকে ফ্ল্যাশার-সহ বা ছাড়া নীলবাতি লাগানো গাড়িতে ঘোরার অধিকার দেওয়া হয় নি। অভিযোগ, তার পরও জামালপুর-সহ একাধিক ব্লকের বিডিওর গাড়িতে নীলবাতি দেখা যায়।
লাল-নীল বাতির গাড়ি ব্যবহার নিয়ে নবান্নের এই নির্দেশের বিষয়ে জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে-সহ জেলার বাকি বিডিওরা কিছুই জানেন না এমনটা নয়। তবুও নিজেকে ‘ভিআইপি’ হিসাবে জাহির করতে কি সরকারি নির্দেশ অমান্য করছেন? উঠছে প্রশ্ন।
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে জামালপুর ব্লকের বিডিও পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন পার্থসারথী। স্থানীয়দের দাবি, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর গাড়িতে নীলবাতি দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, আছে হুটারও। জামালপুর ছাড়াও পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, খণ্ডঘোষ, আউসগ্রাম ১ ও ২ ব্লক, রায়না ১ ও ২ ব্লক, গলসি ২ ব্লক-সহ আরও কয়েকটি ব্লকের বিডিওর গাড়িতে নীলবাতি লাগানো রয়েছে বলে অভিযোগ। সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে কেন গাড়িতে নীলবাতি লাগিয়ে ঘোরেন? প্রশ্নের উত্তরে পার্থসারথী বলেন, “অনেক বিডিওই গাড়িতে নীলবাতি ব্যবহার করছেন। তাই আমিও করছি।’’ যদিও জেলায় এমন অনেক বিডিওই আছেন, যাঁরা গাড়িতে নীলবাতি লাগান। সেই তালিকায় আছেন মেমারি ১ ব্লকের বিডিও শতরূপা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘কে কী করছেন তা আমি বলতে পারব না। তবে বিডিও পদে থেকে আমি নীল বাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর অধিকারী নই।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রানি স্পষ্ট জানান, সরকারী নির্দেশিকা মানতে হবে সবাইকেই। নির্দিষ্ট পদাধিকারী না হলে কেউ নীল বাতি লাগানো গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। কোন কোন বিডিও এমন ‘অনৈতিক’ কাজ করছেন তা তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান আয়েষা। যদিও জেলার পরিবহন আধিকারিক গোবিন্দ নন্দী এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।