পাক বিদেশমন্ত্রীর দাবি মানছেন না বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা! স্পষ্ট করলেন: সমস্যা নিয়ে শুধু আলোচনা হয়েছে, সমাধান হয়নি

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। রবিবার তৌহিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে পাক বিদেশমন্ত্রী দাবি করেন, দু’দেশের মধ্যে অমীমাংসিত তিন সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তবে তৌহিদের বক্তব্য, সমস্যার সমাধান হয়নি। কেবল সমস্যাগুলি সমাধানের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

বস্তুত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে কিছু বিষয়ে সমস্যা অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হল— মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক সেনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে বলেছিল বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, সম্পদের ভাগ দেওয়ারও দাবি জানায় ঢাকা। রবিবারের বৈঠক শেষে ইশাক দাবি করেন, অমীমাংসিত তিনটি বিষয়ে আগেই দু’বার সমাধান হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ বলেন, “আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।”

রবিবার ঢাকায় ওই বৈঠক শেষে তৌহিদের পাশে দাঁড়িয়ে ইশাক বলেন, “অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।” বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক বোঝাতে ‘এক পরিবার, দুই ভাই’-এর উপমাও ব্যবহার করেন তিনি। তখন অমীমাংসিত সমস্যা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় পাক বিদেশমন্ত্রীকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইশাক বলেন, “১৯৭৪ সালে প্রথম বারের মতো বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়েছিল। ওই সময়ের নথি দু’দেশের জন্যই ঐতিহাসিক। এর পরে জেনারেল পারভেজ মুশারফ এখানে (বাংলাদেশে) এলে প্রকাশ্যে ও খোলা মনে বিষয়টির সমাধান হয়। সমস্যাগুলি দু’বার সমাধান হয়ে গিয়েছে। প্রথমে ১৯৭৪ সালে, তার পরে ২০০০ সালের শুরুতে।” তাঁর দাবি, পরিবারের মধ্যে, দুই ভাইয়ের মধ্যে যখন বিষয়টির সমাধান হয়েই গিয়েছে, তখন দু’দেশকেই এগিয়ে যেতে হবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে।

পরবর্তী সময়ে অমীমাংসিত সমস্যার ‘দু’বার সমাধান’-এর বিষয়ে তৌহিদকেও প্রশ্ন করা হয়। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সমস্যার কোনও সমাধান এখনও হয়নি। বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টার বক্তব্য, বৈঠকে অমীমাংসিত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে দু’দেশই জানিয়েছে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, হিসাবপত্র হোক, টাকাপয়সার ব্যাপার সমাধান হোক। আমরা চাই, এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটার ব্যাপারে দুঃখপ্রকাশ করুক, ক্ষমা চেয়ে নিক। আমরা চাই, আটকে পড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নেবে। আমি বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত ভাবে তুলে ধরেছি।” এই সমস্যার সমাধান যে এক দিনের বৈঠকে সম্ভব নয়, তা-ও স্পষ্ট করে দেন তৌহিদ। ইশাকের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা বলেন, “আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। আমরা আমাদের অবস্থান বলেছি। ওঁরা ওঁদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.