ডাইনি অপবাদে প্রায় তিন মাস ঘর ছাড়া বান্দোয়ানের মাকপালি গ্রামের এক প্রৌঢ় দম্পতি। আজ বাড়ি ফেরানোর আবেদন জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন জানালেন বিতাড়িত পরিবার। ডাইনি অপবাদ ও জোর করে জরিমানা আদায়ের ঘটনাটি ঘটে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর।
ওই প্রৌঢ় দম্পতি জানান, তাদের গ্রামে একটি পরিবারের একজন পেটের অসুখে মারা যায়। ওই মৃত্যুর জন্য তাদেরকেই দায়ী করে গ্রামে সমাজের সভা হয়। মাতব্বররা মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৯৬ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। ওই টাকা দ্রুত দেওয়ার জন্য ওই প্রৌঢ় দম্পতিকে এক ঘরে করে চাপ দেয়। চাপে পড়ে জমি সম্পত্তি বন্ধক রেখে কোনো রকমে ৫০ হাজার ৫০০ টাকা দিতে সক্ষম হয়। তার পরও বাকি টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে না দেওয়ায় খুনের হুমকি দেয় মাতব্বররা। বিষয়টি নিয়ে বান্দোয়ান থানায় অভিযোগ জানান ওই প্রৌঢ় দম্পতি। তারপর চারজন মাতব্বরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে জামিন পেয়ে তারা আরও হিংস্র হয়ে ওঠে। তাদের শাসানির পর থেকে ওই পরিবারটি বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছে।
তিন মাসের বেশি সময় ধরে বাড়ির বাইরে থাকায় গৃহ পালিত গবাদি পশু ও চাষের কাজের সরঞ্জাম লোপাট হয়ে যায়। দুষ্কৃতিদের কৌশলে প্রাণে মারার হুমকি সমানে চলছে বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফেরে। তার পর থেকে ওই পরিবারকে শাসানি দিচ্ছে অভিযুক্তরা। এতে ভিত সন্ত্রস্ত হয়ে অসহায় অনুভব করছে আক্রান্ত পরিবারটি। তাদের অভিযোগ, অসহায়দের আতঙ্ক সৃষ্টি করে জোর করে জরিমানা আদায় করে ফূর্তি করা কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই দুষ্কৃতীদের। এর বিহিত এবং নিরাপত্তা দিয়ে বাড়ি ফেরানোর জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানায় পরিবারটি।
এই ঘটনাটি মানুষের কাছে লজ্জাজনক বলে জানান ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পুরুলিয়া শাখা সম্পাদক মধুসূদন মাহাতো। কুসংস্কার আজও সমাজের বড় ব্যাধি বলে তিনি বলেন, দ্রুত ওই গ্রামে পুলিশের সাহায্যে মানুষজনকে কুসংস্কার দূর করার জন্য উদ্যোগী হব।”