জেতার অভ্যাস ছাড়লে চলবে না, লিগ-শিল্ড জিতেও সন্তুষ্ট নন বাগান কোচ মোলিনা

দু’ম্যাচ বাকি থাকতেই আইএসএল লিগ-শিল্ড জিতেছে মোহনবাগান। কিন্তু তার পরেও শেষ দুই ম্যাচকে হালকা ভাবে নিতে চাইছেন না মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা। জেতার অভ্যাস বজায় রাখতে চান তিনি। দলের ছেলেদের সে কথাই জানিয়েছেন।

শনিবার অ্যাওয়ে ম্যাচে মুম্বই সিটির বিরুদ্ধে খেলতে নামবে মোহনবাগান। তার আগে সাংবাদিক বৈঠকে বার বার জেতার প্রসঙ্গ এল মোলিনার কথায়। তিনি বললেন, “প্রথম লক্ষ্য ছিল শিল্ড জেতা। সেটা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের সামনের ম্যাচও জিততে হবে। এক মাস পরেই আইএসএলের ফাইনাল। তাই এই সময় মনঃসংযোগ হারালে চলবে না। জেতার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে।”

এ বার অপ্রতিরোধ্য দেখিয়েছে মোহনবাগানকে। ২২টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দু’টি হেরেছে তারা। এর পরেও দলে উন্নতির জায়গা আছে বলে মনে করেন মোলিনা। শেষ দুই ম্যাচে ফাঁকফোকর ঢাকতে চান তিনি। বাগান কোচ বলেন, “এখনও অনেক জায়গায় উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। শেষ দুটো ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। সমর্থকদের আরও আনন্দ দিতে চাই।”

২২টি ম্যাচে দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই খেলেছে। কয়েক জনকেই সুযোগ দিতে পারেননি মোলিনা। প্রায় পুরো দলকে দেখে নিয়েছেন তিনি। শেষ দুই ম্যাচে কি পরীক্ষানিরীক্ষার পথে হাঁটবেন তিনি? তেমন কোনও পরিকল্পনা নেই বাগান কোচের। মোলিনা বলেন, “দলের পরিবেশ খুব ভাল। হ্যাঁ, সকলকে সব ম্যাচে খুশি রাখা যায় না। সকলে খেলার সুযোগ পায় না। কিন্তু আমার দলের সকলে জানে, যখনই সুযোগ পাবে নিজের সেরাটা দেবে। অনেকে চোটের জন্য খেলতে পারেনি। অনেকে কার্ড সমস্যায়। যে ম্যাচে যাকে দরকার তাকে খেলিয়েছি। মুম্বই ও গোয়া ম্যাচের জন্য আমার আলাদা পরিকল্পনা আছে। ছেলেদের উপর আমার বিশ্বাস আছে। পরের দুটো ম্যাচ জেতার জন্য যাদের খেলানো দরকার তাদেরই খেলাব।”

গত রবিবার ঘরের মাঠে শিল্ড জেতার পর ফুটবলারদের পাশাপাশি মোলিনাকেও উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল। সাধারণত শান্ত থাকেন তিনি। সেই কোচের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই রাতে আর কী ভাবে উল্লাস করেছিলেন বাগান কোচ? মোলিনা বলেন, “শিল্ড জেতার পর মাঠেই উল্লাস করেছিলাম। আমি সাধারণত অত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি না। পরে হোটেলে ফিরেও উল্লাস হয়েছিল। স্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজেও গিয়েছিলাম।”

গত বার লিগ-শিল্ড জিতলেও কাপ জেতা হয়নি বাগানের। এ বার সেই ট্রফিও তান মোলিনা। তবে এখন থেকেই ফাইনালের কথা ভাবছেন না তিনি। কারণ, মাঝে ভারতের জাতীয় দলের খেলা রয়েছে। মোলিনা বলেন, “৮ মার্চ আমাদের শেষ লিগের ম্যাচ। তার পর জাতীয় দলের জন্য কিছু ফুটবলার ছাড়তে হবে। পরে আবার নক আউট খেলা। তার জন্য সময় আছে। তাই এখন থেকে নক আউট নিয়ে ভাবছি না। তখনকার পরিকল্পনা তখন করব। এখন শুধু সামনের দুটো ম্যাচ নিয়েই ভাবছি।”

আইএসএলে মুম্বই বরাবরই মোহনবাগানের কঠিন প্রতিপক্ষ। তাই এই ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে বাগান সমর্থকদের মনে। মোলিনাও সেই ভাবেই ভাবছেন। মুম্বই ম্যাচের আগে সতর্ক তিনি। মোলিনা বলেন, “মুম্বই কঠিন প্রতিপক্ষ। ওদের দলে ভাল ফুটবলার আছে। এ বার হয়তো ওরা অতটা সাফল্য পাচ্ছে না। কিন্তু ওদের হালকা ভাবে নিচ্ছি না। মুখোমুখি সাক্ষাতে ওরা আমাদের থেকে এগিয়ে। তবে সেটা অতীত। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছি। ওদের ঘরের মাঠে গিয়ে ওদের হারাতে চাই।”

দলে পরীক্ষানিরীক্ষা হলেও এক জনকে বাইরে রাখতে চান না মোলিনা। তাঁর নাম বিশাল কাইথ। দলের গোলরক্ষক। এ বার ২২টি ম্যাচের মধ্যে ১৪টি ম্যাচে গোল খাননি তিনি। বাগানের ভারতসেরা হওয়ার নেপথ্যে বড় ভূমিকা রয়েছে তাঁর। পরের ম্যাচগুলিতেও যে গোলের নীচে বিশালই খেলবেন তা আগে থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাগান কোচ। মোলিনা বলেন, “আমি সব সময় বলেছি, প্রতিটা ম্যাচে সেরা দল নামাব। আমার মতে, বিশাল এখন ভারতের সেরা গোলরক্ষক। ১৪টা ম্যাচে ও গোল খায়নি। ওর কার্ড সমস্যাও হয়নি। তাই ওকেই খেলিয়েছি। সামনের দিনেও সেটাই করব। তার অর্থ এই নয়, দলের বাকি গোলরক্ষকদের উপর আমার ভরসা নেই। কিন্তু এখন গোলের নীচে বিশাল ছাড়া আর কারও কথা ভাবতে পারছি না। ওর টেকনিক খুব ভাল। আত্মবিশ্বাস আছে। ও নিজেই খেলার বাইরে থাকতে চায় না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.