আগামী ৩০ এপ্রিল, অক্ষয় তৃতীয়ায় দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন। জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার কথা স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আগের দিন, অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল হবে বিশেষ হোমযজ্ঞ। তার আগে নিরাপত্তাবলয়ে মুড়ে ফেলা হল সৈকতনগরীকে। বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে গোটা দিঘা জুড়ে। নজরদারি শুরু হয়েছে দিঘা গেট এবং ওড়িশা সীমানাতেও।
কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই দিঘা গেটের কাছে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সোমবার বেলার দিক থেকে ওল্ড দিঘায় যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হবে। আগে থেকেই নজরদারি চলছে পর্যটকদের যাতায়াতে। আগামী কয়েক দিন দিঘার সুরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও খামতি রাখা হবে না।’’
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আগামী ২৮ এপ্রিল বিকেলেই দিঘায় চলে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তবে পুলিশের অন্য একটি সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী হয়তো ২৯ তারিখ দিঘায় আসবেন। এসে হোমযজ্ঞের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্ছিদ্র রাখতে অন্তত ৮০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এর জন্য পাশের জেলাগুলি থেকেও পুলিশবাহিনী নিয়ে আসা হচ্ছে দিঘায়। পাশাপাশি সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘার জগন্নাথ ধাম পর্যন্ত ১১৬বি জাতীয় সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন জগন্নাথ মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও, উপাচার শুরু হয়ে গিয়েছে কয়েক দিন আগে থেকেই। পুরীর মন্দিরের রাজেশ দয়িতাপতির নেতৃত্বে শুরু হয়েছে শান্তিযজ্ঞ। রয়েছেন ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাসও। ইসকনের বিভিন্ন শাখার অন্তত ৬০ জন ভক্তও মাঙ্গলিক কাজে হাত লাগিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় এক কোটি মন্ত্রোচ্চারণের লক্ষ্যে চারটি কুণ্ডের মাঝে মহাকুণ্ড জ্বালিয়ে চলছে যজ্ঞ। গর্ভগৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবতাকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে জগন্নাথদেবের বসার পিঁড়ির পুজো। দুগ্ধস্নান সম্পন্ন হয়েছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং সুদর্শনের। লক্ষ্মী, বিমলা, সত্যভামা-সহ সমস্ত দেবদেবীর মূর্তিকেও দুগ্ধস্নান করানো হয়েছে। দিঘা জুড়ে মাইকে বাজছে মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর। ২৯ তারিখ হবে মহাযজ্ঞ। ওই দিন পর্যন্ত রোজই হোমযজ্ঞ চলবে বলে মন্দির সূত্রে খবর।
রবিবার ছুটির দিন থাকায় দিঘায় পর্যটকদের ব্যাপক ভিড়। মন্দিরের সামনেও উৎসাহী পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের জন্য মন্দিরে প্রবেশ এখনও সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। মন্দিরের সামনে ও আশপাশের এলাকায় কড়া প্রহরায় রয়েছে পুলিশবাহিনী। জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনের পোস্টারে ছয়লাপ গোটা জেলা। রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা। জায়গায় জায়গায় লাগানো হয়েছে আলোর গেট। শনিবার রাতের দিকে ঝড়ে একটি আলোর গেট রাস্তায় ভেঙে পড়ে। যার জেরে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় ভেঙে পড়া আলোর গেট সরিয়ে ফেলা হয়েছে রাস্তা থেকে।
দিঘার হোটেল মালিকদের একাংশ মনে করছেন, এই সময়ে দিঘায় হোটেল পেতে বেশ বেগ পেতে হতে পারে। কয়েক মাস থেকেই বহু পর্যটক আগামী বুকিং করে রেখেছেন হোটেলগুলিতে। তা ছাড়া প্রশাসনিক আধিকারিকদের একটি বড় অংশের জন্যেও হোটেল আগাম নিয়ে রাখা হয়েছে। তবে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য কিছু না কিছু ব্যবস্থা করা হবে বলেই জানিয়েছেন দিঘার হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনমতো কিছু হোটেল বুকিং রাখা হয়েছে। তবে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই তিন দিন পর্যটকদের থাকার ক্ষেত্রে খুব বেশি সমস্যা না হয়, সেটা দেখা হবে। জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে আসা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা ঠিকই হয়ে যাবে।’’