ব্যাঙ্ককে সেই বহুতলের ধ্বংসস্তূপে এখনও আটকে অন্তত ৫০ জন, সঠিক অবস্থান জানতে এবার রোবট পাঠালেন বিজ্ঞানীরা

মায়ানমারে ভূমিকম্পের পরে কেটে গিয়েছে দু’দিন। এখনও তাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতলের ধ্বংসাবশেষে আটকে রয়েছেন অন্তত ৫০ জন। কত জন আটকে, সেই সংখ্যা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। টানা প্রায় ৪০ ঘণ্টা ধরে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে তাইল্যান্ডের পুলিশ, দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। সহায়তা করছে আমেরিকার বিশেষ বাহিনী। কিন্তু সুরাহা তেমন হচ্ছে না। কারণ, ৩০তলার আবাসন ধসে চারতলা বাড়ির সমান উঁচু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধারের কাজ সহজ নয়। তাই এ বার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে প্রশাসন। ধ্বংসস্তূপের ঠিক কোথায় আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা, তা জানতে পাঠানো হয়েছে রোবট। দিন-রাত ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। যদি ধ্বংসস্তূপের কোনও অংশ থেকে কারও সাড়া মেলে!

শুক্রবার দুপুর নাগাদ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মায়ানমার। রিখটার স্কেলে তার মাত্রা ছিল ৭.৭। কেঁপে উঠেছে তাইল্যান্ডও। সেই দেশের রাজধানী ব্যাঙ্ককের চাটু চাক বাজার এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎসস্থল থেকে তার দূরত্ব ছিল প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার। সেখানেই ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ ৩০তলা আবাসনটি। আটকে পড়েন প্রায় শতাধিক মানুষ। শনিবার পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে প্রায় ৪০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। রবিবার সকাল পর্যন্ত ওই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ১৭ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভেঙে পড়া বহুতলে এখনও আটকে রয়েছেন অন্তত ৫০ জন। বেশির ভাগই শ্রমিক বলে খবর। ভগ্নস্তূপের ঠিক কোথায় আটকে রয়েছেন শ্রমিকেরা, তা জানতে বিজ্ঞানীরা রোবট পাঠিয়েছেন সেখানে। এই রোবট থ্রিডি ম্যাপিং করে বোঝার চেষ্টা করবে, কোথায় থাকতে পারেন শ্রমিকেরা। বিশেষ ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলারও চেষ্টা করবে সেই রোবট। তার পরে সেই তথ্য দেখে নির্দিষ্ট অংশে উদ্ধারকাজ শুরু করা হবে। ধ্বংসস্তূপের উপর রাতদিন ঘুরছে ড্রোন। তার মাধ্যমেও চলছে নজরদারি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর ১টা নাগাদ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল ৩০তলা নির্মীয়মাণ বাড়িটি। সেখানে আটকে পড়েন শ্রমিকেরা। তার পর থেকে চলছে উদ্ধারকাজ। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ককের মাত্র ১০ শতাংশ বাড়িই ভূমিকম্প প্রতিরোধে সক্ষম। শুক্রবারের কম্পনের জেরে তাই শহরের বেশির ভাগ বহুতলেই ফাটল ধরেছে। এমনকি, হোটেলগুলিতেও ফাটল ধরেছে। বিশেষত চাটু চাক বাজার এলাকায়। সারা বছর ব্যাঙ্ককে পর্যটকদের ভিড় জমে। এই পরিস্থিতিতে ওই এলাকার অধিকাংশ হোটেলই খালি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ফাটল পরীক্ষা করছেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারেরা। নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসনও। শুক্রবার শহরের বহু মানুষ বহুতল ছেড়ে পার্কে বিশেষ শিবিরে রাত কাটিয়েছেন। শনিবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। ব্যাঙ্ককের ৯০ শতাংশ রেলপথ সক্রিয় হয়েছে। দু’টি মাত্র রুটে এখনও ট্রেন চলাচল করছে না। শপিং মলগুলিও চালু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.