উত্তরখণ্ডের ধারালি গ্রামে মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে আচমকা নেমে আসে হড়পা বান। ভেসে যায় একের পর এক বাড়ি, হোটেল। ধারালি থেকে চার কিলোমিটার দূরে হর্ষিলের সেনা ছাউনিও কোপে পড়েছে। নিখোঁজ হয়েছেন সেখানকার অন্তত নয় জওয়ান। এই ধাক্কা সামলে বাকিরা নেমে পড়েছেন উদ্ধারকাজে। এখন পর্যন্ত ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা হড়পা বানে বিধ্বস্ত এলাকা থেকে ৫০ জনকে উদ্ধার করেছেন। চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে নিখোঁজ বহু। প্রশাসনের আশঙ্কা, মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বুধবার রাজ্যের বেশ কিছু জেলার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি বৈঠকে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে কেদারনাথ যাত্রা।
গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে পর্যটক পুণ্যার্থীরা এই ধারালিতে থাকেন। সেখানে প্রচুর হোটেল, হোমস্টে রয়েছে। ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে। তার জেরে নদী প্লাবিত হয়েছে। স্বল্প সময়ে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হলে তাকে মেঘভাঙা বৃষ্টি বলে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের বৃষ্টি আকছাড় হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ধারালি গ্রামের কাছে এই মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়। খবর পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যান অন্তত ১৫০ জন জওয়ান। কাদামাটি সরিয়ে গ্রামবাসীদের উদ্ধারের কাজ শুরু করেন তাঁরা। যদিও তত ক্ষণে হর্ষিলের সেনা ছাউনি বিপর্যস্ত। উদ্ধার কাজে নেমেছে রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তৈরি রয়েছে বায়ুসেনাবাহিনীও।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধারালি এলাকায় বৃষ্টি চলেছে। সে কারণে উদ্ধারকাজ ব্যহত হয়েছে। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। নাগরিকদের সব রকম সাহায্য করতে ভারতীয় সেনা প্রস্তুত। এই ঘটনাকে ‘বেদনাদায়ক’ বলে জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ধামি। উত্তরাখণ্ডের প্রিন্সিপাল সচিব আরকে সুধাংশু জানিয়েছেন, হড়পা বানের কারণে ৪০ থেকে ৫০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে উদ্ধারের জন্য হেলিকপ্টার নামানো যায়নি। ভারতীয় মৌসম ভবন জানিয়েছে, বুধবারও ভারী বৃষ্টি চলবে উত্তরাখণ্ডের ধারালিতে। জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। গোটা রাজ্যের রয়েছে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। ৯ অগস্ট পর্যন্ত চলবে দুর্যোগ। বৃষ্টির কথা মনে করে উত্তরাখণ্ডের চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, আলমোরা, হরিদ্বার, পিথোরাগড়ের স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
হড়পা বানের বেশ কিছু ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে (আনন্দবাজার ডট কম তার সত্যতা যাচাই করেনি)। ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে কাদা-জলে ভেসে যাচ্ছে গাড়ি। ভিতরে রয়েছেন যাত্রীরা। ধারালিতে নদী প্লাবিত হতে দেখে বহু মানুষকে আর্তনাদ করতেও শোনা গিয়েছে। এ দিকে লাইনে ধস নামায় বন্ধ করা হয়েছে হরিদ্বার-দেহরাদূন পথে ট্রেন চলাচল। হর্ষিল উপত্যকায় একটি হেলিপ্যাড ভেসে গিয়েছে। প্রশাসন কিছু হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছ— ০১৩৭৪-২২২৭২২, ৭৩১০৯১৩১২৯।