১০ বছর বয়সেই তো ৯০ মিটারের ছক্কা হাঁকিয়েছে! সূর্যবংশীর শতরানে বিস্মিত নন ছোটবেলার কোচ মণীশ

বিষ্ময় কাটছে না ক্রিকেট বিশ্বের। ১৪ বছরের একটা ছেলে আইপিএলের মতো মঞ্চে কী ভাবে এমন বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে পারে! বিস্মিত নন শুধু এক জন। তিনি সূর্যবংশীর ছোটবেলার কোচ মণীশ ওঝা। নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটারকে। তিনি জানেন তাঁর ছাত্র ব্যাট হাতে পেলে কী করতে পারে। ১০ বছর বয়স থেকেই ৯০ মিটার দূরত্বের ছয় মারতে পারে সূর্যবংশী।

ছাত্রের শতরানে উচ্ছ্বসিত হলেও বিস্মিত নন মণীশ। বিশ্বের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সূর্যবংশী শতরান করার পরের দিন গর্বিত মণীশ বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটের জন্য এক দিনও সূর্যবংশীকে বকাঝকা করতে হয়নি আমায়। কোন শট বা টেকনিক ওকে দ্বিতীয় বার বোঝাতে হয়নি। এক বারে শিখে নিত ছোট থেকে। ছাত্র হিসাবে অসম্ভব ভাল সূর্যবংশী।’’

মণীশ জানিয়েছেন সূর্যবংশীর ক্রিকেট শেখার কাহিনি। তিনি বলেছেন, ‘‘২০১৮ সালে ওকে প্রথম দেখি। প্রথম দিন বাবার সঙ্গে কোচিং ক্যাম্পে এসেছিল। সে দিন আমি ছিলাম না। তাই দেখা হয়নি। তার এক সপ্তাহ পর দেখা হয়েছিল। ওর বাবা আমার ফোন নম্বর জোগাড় করেছিলেন। আমাকে ফোন করেন। ফোনে কথা হওয়ার পর আসতে বলেছিলাম।’’

১৪ বছরের একটা ছেলে এত শক্তিশালী শট কী করে মারতে পারে? মণীশ বলেছেন, ‘‘এটা অসম্ভব কিছু নয়। পাওয়ার হিটিংয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আত্মবিশ্বাস। নিজের স্বচ্ছন্দ অনুযায়ী খেলতে হয়। ছোট থেকে ওকে ফুলটস বলে অনুশীলন করাতাম। ছোট বেলায় বোলিং মেশিনের বল খেলতে পারত না। বলের গতি সামলাতে পারত না। তা ছাড়া বল পিচে পড়ে ওর মাথার উপর দিয়ে চলে যেত। তাই ফুলটস বলে অনুশীলন করাতাম। জোর দিতাম শটের টাইমিং এবং টেকনিকের উপর। সাধারণত ওকে ব্যাট একটু উঁচুতে তুলে ধরতে বলতাম। বলের লাইনে গিয়ে খেলতে বলতাম। যতটা জোরে সম্ভব বল মারার কথা বলতাম। ক্রিকেটের সব ধরনের শট ওকে শেখাতাম। কাট, পুল, ব্যাট-ফুট পাঞ্চ মারা যেমন শিখিয়েছি, তেমনই বল ছাড়তেও শিখিয়েছি। হাত খুলে ব্যাট করতে বলতাম। লক্ষ্য করলে দেখবেন, ব্যাট করার সময় সূর্যবংশীর হাতের অবস্থান অনেকটা অভিষেক শর্মা বা যুবরাজ সিংহের মতো থাকে।’’

মণীশ কখনও সূর্যবংশীকে পুরনো দিনের মতো ব্যাট করার কথা বলতেন না। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পরামর্শই দিতেন। ছোট বয়সে বলের গতি সামলানোর জন্য শক্তিপ্রয়োগ করে শট খেলতে শিখিয়েছেন। মণীশ বলেছেন, ‘‘প্রথম থেকেই দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০ বল খেলত সূর্যবংশী। বোলিং মেশিন থেকে এমন ভাবে বল দেওয়া হত, যাতে ওকে সব ধরনের শট মারতে হয়। সামনের এবং পিছনের পায়ে খেলতে হয়। কয়েকটা বল অন্তর অন্তর ফিল্ডিং বদলে দিতাম। নানা রকম ফিল্ডিং সাজাতাম। মাঠের কোন জায়গায় শট মারা যাবে না বলে দিতাম। তুলে মারতে বলতাম ফিল্ডারদের এড়ানোর জন্য। ছোট থেকেই ৯০ মিটার দূরত্বের ছয় মারতে পারত। তখন ওর বয়স বছর দশেক হবে।’’

মণীশ জানিয়েছেন, ফিল্ডারদের অবস্থান নিয়ে খুব একটা ভাবে না সূর্যবংশী। ১৪ বছরের কিশোরের লক্ষ্য থাকে ফিল্ডারদের নাগাল এড়িয়ে মাঠের বাইরে বল পাঠানো। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের দিন সকালেও ফোনে ছাত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন মণীশ। তিনি বলেছেন, ‘‘সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আমাকে ফোন করেছিল সূর্যবংশী। ওকে বলেছিলাম, ‘তোকে পাওয়ার প্লে নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। প্রতিটি ওভারে একই ভাবে খেলার চেষ্টা করতে হবে। বল ঠিক ভাবে মারতে পারলে, মাঠের বাইরে যাবেই। চাপ নেওয়ার কিছু নেই। ধৈর্য্য ধরতে হবে। মারার বলের জন্য অপেক্ষা করবি। যে বলের যেমন পরিণতি হওয়া উচিত, সেটাই করার চেষ্টা করবি। নিজের স্বাভাবিক আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের উপর আস্থা রাখবি।’’’ ম্যাচের দিন সকালে প্রিয় ছাত্রকে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন মণীশ। যশস্বী জয়সওয়ালের ফুটওয়ার্ক এবং খুচরো রান নেওয়ার কৌশল দেখে শিখতে বলেছেন সূর্যবংশীকে। মারার মতো বল সব সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে। কঠিন পরিস্থিতিতেও কী ভাবে ধীরে ধীরে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তা ভারতীয় দলের ওপেনারের থেকে শেখার পরামর্শ দিয়েছেন মণীশ। ভাল বল হলে অবশ্যই লাইনে গিয়ে খেলার কথা বলেছেন।

মণীশের বিশ্বাস ছিল কথাগুলি দ্বিতীয় বার বলতে হবে না সূর্যবংশীকে। গুজরাতের বিরুদ্ধে ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংসে নিজের পরামর্শের ছাপ পেয়েছেন। তাই আরও খুশি তিনি। আরও ভাল কিছুর আশায় রয়েছেন ১৪ বছরের কিশোরের কারিগর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.