জনতার জন্য খুলে দেওয়া হল রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যান, কী আছে সেখানে? কী ভাবে দেখবেন?

বসন্তে কি কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন! তা হলে দিল্লি ঘুরে আসতে পারেন। দিল্লিতে ইতিহাসপ্রসিদ্ধ দেখার মতো জায়গা তো রয়েছেই, কিছু দূরে আগরার তাজমহলও আছে। তবে এই বসন্তে দিল্লির বাড়তি আকর্ষণ হতে পারে রাষ্ট্রপতি ভবন। বসন্তে রাইসিনা হিল্‌স দরজা খুলে দিচ্ছে সাধারণ জনগণের জন্য। ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ, রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যান, যা আগে মুঘল গার্ডেন নামে পরিচিত ছিল, তা ঘুরে দেখতে পারবেন ইচ্ছুক পর্যটকেরা। আর রাষ্ট্রপতির সেই বাগানও দেখার মতোই!

কী কী দেখার আছে সেখানে?

প্রতি বছরই রাষ্ট্রপতির বাগানকে নতুন ভাবে সাজানো হয়। তা ছাড়া কিছু চিরকালীন আকর্ষণও রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে পর্যটকদের জন্য তৈরি ফুড কোর্টে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও। ফলে একটা দিন একটা বেলা সহজেই কাটিয়ে দেওয়া যায় অমৃত উদ্যানে।

রাষ্ট্রপতি ভবনের সার্কুলার গার্ডেন।

প্রায় ১৫ একর জুড়ে বিস্তৃত রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যান। রাইসিনা হিল্‌সের ঐতিহাসিক ভবনটির লাগোয়া সেই বাগান তার অবস্থানগত কারণেই দেখার মতো। তবে সেই বাগানের অনেক ভাগও রয়েছে। সেগুলির নাম— ইস্ট লন, সেন্ট্রাল লন, লং গার্ডেন এবং সার্কুলার গার্ডেন। এর মধ্যে একটি অংশে কেয়ারি করা বিদেশি এবং দেশি ফুলের বাগান, যা ২০২৫ সালের বসন্তের জন্য নতুন করে দেশি-বিদেশি এবং বিরল প্রজাতির মরসুমি ফুলে সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে জলাশয়, নানা রকম স্থাপত্যে সাজানো বাগান।

বাল বাটিকায় গাছ-বাড়ি।

রয়েছে ছোটদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থাও। রাষ্ট্রপতির বাগানে ছোটদের খেলার জায়গার নাম বাল বাটিকা। যেখানে রয়েছে ২২৫ বছরের পুরনো একটি শিশু গাছ, একটি গাছ-বাড়ি আর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে প্রকৃতিকে জানার একটি ক্লাসরুম।

রাষ্ট্রপতি ভবনে ফুলের ঘড়ি।

ছোটদের বাগানের লাগোয়া বনসাই গাছের বাগান। তার পাশে রয়েছে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির ফুল এবং ফলের গাছের বাগানও। সেখানেই দেখা যাবে ফুলের ঘড়ি, ভার্টিকাল গার্ডেন, কিছু দূরে মিউজ়িক্যাল ফাউন্টেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ভবনে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত একটি প্রদর্শনীও চলবে। সেটিও দেখতে পাবেন পর্যটকেরা।

বাগান ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের নজরকাড়া স্থাপত্য।

খাওয়াদাওয়ার কী ব্যবস্থা?

অমৃত উদ্যানের একটি অংশই ঘিরে তৈরি করা হয় ফুড কোর্ট। সেখান থেকে খাবার কিনে খেতে পারেন। প্রাতরাশ থেকে জলখাবার এবং দুপুরের পেট ভরানো খাবারের ব্যবস্থাও থাকে। রাজমা চাওল, কাড়ি চাওল, ছোলে চাওল, পাওভাজি, ভেজ বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস, মাঞ্চুরিয়ান থেকে শুরু করে স্যান্ডউইচ, বার্গার, কেক, কচুরি, সিঙাড়া, জিলিপি, গুলাব জামুন, আইসক্রিম— সব ধরনের খাবার থাকে। থাকে চা-কফি, নরম পানীয়ের ব্যবস্থাও।

সুরের তালে ফোয়ারার নাচও দেখা যাবে অমৃত উদ্যানে।

কখন যেতে পারেন?

২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ মার্চ পর্যন্ত খোলা থাকবে অমৃত উদ্যান। সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা। তবে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের পরে আর অতিথিরা ঢুকতে পারবেন না। প্রতি সোমবার বন্ধ থাকবে রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যান। সপ্তাহের বাকি ছ’দিন খোলা থাকবে। বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য রাষ্ট্রপতি ভবনের ৩৫ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে হবে।

রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যানে চলবে প্রদর্শনীও।

কী ভাবে যাবেন?

রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যানে ঘুরতে হলে বুকিং করতে হবে রাষ্ট্রপতি ভবনের ওয়েবসাইট থেকে। ওয়েবসাইটে গেলে অমৃত উদ্যানের লিঙ্ক দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলেই খুলবে বুকিং পেজ। যে যে তারিখে পর্যটকের সংখ্যা নির্ধারিত সীমা পেরিয়ে গিয়েছে, সেই তারিখগুলি সাদা রঙে চিহ্নিত করা থাকবে। সবুজ রঙে চিহ্নিত তারিখগুলি বুকিংয়ের জন্য খোলা। সুবিধামতো তারিখ বেছে নিয়ে কোন সময়ে যাবেন বলে ঠিক করছেন তা বেছে নিলে জানতে চাওয়া হবে কত বয়সের কত জন আসতে চান, সেই লিঙ্কে ক্লিক করলে মোবাইল নম্বর জানতে চাওয়া হবে। মোবাইলে আসা ওটিপির মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে পারবেন আপনার অমৃত উদ্যান সফর।

রাষ্ট্রপতি ভবনের অমৃত উদ্যানে আসতে হলে আগে থেকে বুকিং করতে হবে।

জেনে রাখুন

রাষ্ট্রপতি ভবনে পর্যটকেরা মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক চাবি, পার্স, হ্যান্ডব্যাগ, জলের বোতল এবং শিশুদের দুধের বোতল নিয়ে ঢুকতে পারেন।

রাষ্ট্রপতি ভবনের ভিতরে পরিস্রুত খাবার জল, শৌচালয়, পার্কিং, শাটল পরিষেবা, হুইল চেয়ার, জিনিসপত্র রাখার ঘর, বিশ্রামকক্ষ, প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি ভবনের ভিতরে একটি স্যুভেনিরের দোকানও রয়েছে। সেখান থেকে জিনিস কিনতেও পারবেন পর্যটকেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.