সেটা ১৯৮২ সাল। বলিউডের জনপ্রিয় ছবি ‘কুলি’র শুটিং চলাকালীন গুরুতর আহত হন অমিতাভ বচ্চন। স্বয়ং অমিতাভ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কুলি’র সেই দুর্ঘটনার পর তিনি নবজন্ম পেয়েছেন। জখম অমিতাভকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁর অস্ত্রোপচার করতে হয়। তলপেটে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তাঁর। প্রায় কোমার মতো অবস্থায় পৌঁছেছিলেন ‘বিগ বি’। সেই সময় নাকি কব্জি ধরে তাঁর নাড়ির গতিই পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকেরা। কয়েক মিনিটের জন্য তাঁদের মনে হয়েছিল, অভিনেতার শরীরে বুঝি প্রাণটাই নেই।
মজার ছলে অনেকেই বলেন, প্রাণটা বুঝি গলার কাছে উঠে এসেছে। অমিতাভ বচ্চনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা নাকি তেমনই হয়েছিল। ‘বিগ বি’ নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর কব্জি ধরে পালস রেট পাওয়া যায়নি। চিকিৎসকেরা বার বার চেষ্টা করে শেষে গলার কাছে কয়েক সেকেন্ডের জন্য নাড়ির গতি পান আর এতেই তাঁরা বোঝেন যে, অভিনেতা প্রায় কোমায় পৌঁছে গিয়েছেন।
কব্জি ধরেই যে পালস রেট মাপা হয়, তা জানেন বেশির ভাগই। শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ থেকেও পালস রেট পরিমাপ করা যায় কি? এই বিষয়ে হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় মৃতপ্রায় রোগী অথবা গুরুতর অসুখে ভুগছেন এমন কারও কব্জি থেকে পালস রেট অনেক সময়েই পাওয়া যায় না। তবে সেটিকে বিরল অবস্থাই বলা যায়। সাধারণত একজন সুস্থ ও সবল ব্যক্তির নাড়ির গতি হতে পারে মিনিটে ৬০ থেকে ১০০। শরীরের গুরুতর আঘাত লেগে যদি রক্তজালিকাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। তখন নাড়ির স্পন্দনও ধীরগতিতে চলে। শরীরের একাধিক ধমনী ছিঁড়ে গেলেও এমন হতে পারে।
কব্জি ছাড়া আর কোন কোন জায়গা থেকে পালস রেট মাপা যায়?
ঘাড় (ক্যারোটিড ধমনী)
ঘাড়ের পাশে, শ্বাসনালির কাছে, গলার কাছ থেকে পালস রেট মাপা যায়।
কুঁচকি (ফিমোরাল ধমনী)
কুঁচকির কাছাকাছি ফিমোরাল ধমনীর কাছ থেকে নাড়ির স্পন্দন অনুভব করা যায়।
হাঁটুর পিছনে (পপলিটিয়াল ধমনী)
হাঁটুর পিছন দিকে পপলিটিয়াল নামক ধমনী থেকে নাড়ির স্পন্দন মাপা যেতে পারে।
গোড়ালির কাছে (পোস্টেরিয়র টিবিয়াল ধমনী)
গোড়ালির পিছনের দিকের ধমনী থেকেও নাড়ির গতি মাপা যায়।
পায়ের পাতা (ডর্সালিস পেডিস পালস)
পায়ের পাতার উপর থেকেও নাড়ির গতি মাপা যায়। পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজ়িজ় রয়েছে, এমন রোগীদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে নাড়ির গতি মাপেন চিকিৎসকেরা।