জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ১২টি দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে আরও কয়েকটি দেশের উপরে। তবে ওই দেশগুলির বেশ কয়েক জন নাগরিক এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরেও আমেরিকায় প্রবেশাধিকার পেতে পারেন।
২০২৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসতে চলেছে আমেরিকা, কানাডা এবং মেক্সিকোয়। আবার ২০২৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক্সের আসর বসবে আমেরিকার লস এঞ্জেলস শহরে। ফুটবল বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিক্স— দু’টি ক্ষেত্রেই প্রতিযোগী দেশগুলির সদস্যেরা আমেরিকায় যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ওই ১২টি দেশের নাগরিকদের উপর প্রযোজ্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
ইরানে ধর্মীয় এবং জাতিগত নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘুদের একাংশকে বিশেষ অভিবাসী ভিসা দিয়েছিল আমেরিকা। তাঁদের উপরও ট্রাম্পের নয়া এই নিষেধাজ্ঞ বলবৎ হচ্ছে না। যার অর্থ আপাতত তাঁরা আমেরিকাতেই থাকতে পারবেন। যে সমস্ত আফগান নাগরিক বিশেষ ভিসা পেয়েছিলেন, তাঁরাও আমেরিকায় থাকতে পারবেন। তা ছাড়া আইন মোতাবেক যাঁরা আমেরিকায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকৃত হয়েছেন, নয়া আইন প্রযুক্ত হবে না তাঁদের উপরেও।
এ ক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারেন দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তিরাও। অর্থাৎ, যাঁরা একই সঙ্গে আমেরিকার এবং সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক, তাঁরা এই আইনের আওতায় পড়বেন না। সর্বোপরি নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির আমেরিকায় প্রবেশাধিকারের বিষয়ে ছাড় দিতে পারে মার্কিন বিদেশ দফতর।
ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে আগামী ৯ জুন থেকে আমেরিকায় ঢুকতে পারবেন না আফগানিস্তান, মায়ানমার, চাদ, রিপাবলিক অফ কঙ্গো, ইকিউটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেনের বাসিন্দারা। প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আংশিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের উপরও।
হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়া অনেক দেশেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপকে মদত দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তালিবান শাসিত আফগানিস্তান, ইরান এবং কিউবার উদাহরণ টানছে ওয়াশিংটন। আবার চাদ কিংবা ইরিত্রিয়ার মতো দেশগুলির নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তাঁরা ভিসার মেয়াদ ফুরোলেও আমেরিকায় থেকে যাচ্ছেন বা থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীদের ঢোকা রুখতেই তাঁর এই পদক্ষেপ।
তবে ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের বক্তব্য, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও কোণঠাসা হবে আমেরিকা। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলিও। ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘বৈষম্যমূলক এবং হিংস্র’ বলে দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে প্রথম দফায় সাতটি ‘মুসলমান প্রধান দেশের’ উপর একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়ার মতো দেশও। তবে বিতর্কের মুখে মুসলমান প্রধান নয়, এমন দু’টি দেশকে (উত্তর কোরিয়া এবং ভেনেজুয়েলা) ওই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেন ট্রাম্প। ২০১৮ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞাকে বহাল রাখে। পরে অবশ্য জো বাইডেন প্রশাসন ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।