এ এক অন্যরকম যুদ্ধ। মানবসভ্যতা (Human Civilization) এমন যুদ্ধ আগে দেখেনি। এ যুদ্ধ এ আই (Artificial Intelligence) বনাম মানুষের মস্তিষ্কের যুদ্ধ। এ আই প্রযুক্তি বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা এসে তার সৃষ্টিকর্তা মানুষকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। এ আই-এর প্রভাব এখন সর্বব্যাপ্ত। কিন্তু এখনও মানুষের মস্তিষ্ককে সে টপকাতে পারেনি। কিন্তু দ্রুত সে-ও এগোচ্ছে। প্রতি মুহূর্তেই। এবার ‘শক্তি’র মাধ্যমে সেই অগ্রগতি যেন আর একটু বোঝা গেল। কী এই ‘শক্তি’ (Shakti)?
‘ শক্তি’
এই পরিসরে বর্ধমানের ডিজিটাল শিল্পী, পরিচালক সৌরভ দাস তৈরি করেছেন প্রথম এক অন্যরকম মহালয়ার প্রোগ্রাম। যার টাইটেল– ‘ শক্তি’। এ আই, ভিএফএক্স, মোশন ক্যাপচারের মতো প্রযুক্তি কাজে লাগালেও তাঁর মহিষাসুরমর্দিনীতে থাকছে হিউম্যান টাচ। ক্যারেক্টরগুলি এখানে নিছক যান্ত্রিক নয়। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন তাঁর ছাত্রছাত্রীরাও। যন্ত্র আর মানুষের মন জুড়ে গিয়েছে এতে।
বাংলা থেকে আন্তর্জাতিক
মহালয়া মানেই বাঙালির ভোরের নস্ট্যালজিয়া– বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ, সঙ্গে মহিষাসুরমর্দিনীর কাহিনি। এবার সেই চেনা আবহের মাঝেই নতুন সংযোজন এই এ আই-নির্মিত মহালয়া। ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেখে ফেলেছেন এই অভিনব উপস্থাপনা। ভিজ্যুয়াল এফেক্ট শিল্পী তথা পরিচালক সৌরভ দাস এবং প্রযোজক সৌমি দত্ত রায় জানালেন, তাঁদের এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বাংলার মহালয়াকে আন্তর্জাতিক মানের ছোঁয়া দেওয়া।
এআই দুর্গা, এআই শিব
পরিচালক সৌরভ দাস বলেন, মহালয়া আমাদের আবেগের জায়গা। মানুষ ভোরবেলা উঠে কিছু বিশেষ দেখবে বলেই অপেক্ষা করে। কিন্তু সিনেমাটিক ধারাবাহিকতা এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রযুক্তির সাহায্যে সেই আবেগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে চাই আমরা। এই এ আই মহালয়ায় দুর্গার মুখ গড়ে তোলা হয়েছে তাঁদেরই এক ছাত্রীর মুখাবয়বকে ভিত্তি করে। এমনকি মহাদেবও তৈরি হয়েছে তাঁদের এক ছাত্রের মুখের আদলে। পরিচালকের কথায়, এটা আপাতত পরীক্ষামূলক উদ্যোগ। যদি সফল হয়, আগামী দিনে আরও চরিত্র নিয়ে হাজির হব।
নস্টালজিয়া এবং
সৌরভ দাস ডান্স ট্রেনার, একই সঙ্গে ভিজ্যুয়াল এফেক্ট শিল্পী। টলিউডের সম্ভাব্য প্রথম ভিএফএক্স ছবি কোহিনূর পরিচালনা করেছেন সৌরভ দাস। যাতে ছিলেন রজতাভ দত্ত-সহ অন্যরা। সৌরভ জানিয়েছেন, মহালয়া আসলে নস্টালজিয়া। সেই মহালয়ায় এআই ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক মাত্রা যোগ করতে চেয়েছি।’ তাঁর কথায়, বিষয়টা একই থাকবে, শুধুমাত্র প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে আর একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। প্রযুক্তি, নস্ট্যালজিয়া আর নতুন প্রজন্মের আবেগ– সব মিলিয়ে তাঁর মহালয়া আসলে এক অন্য রূপ, যার ট্রেলার, টিজার ইতিমধ্যেই দর্শকমহলে তুমুল সাড়া ফেলেছে।
নতুন মহালয়া
দুর্গাপুজা বাঙালির হৃদয়ের পুজো, তবে মহালয়া বাঙালির কাছে অন্য নস্টালজিয়া। রাতে অ্যালার্ম দিয়ে শুয়ে ভোরে ওঠার দিন এই মহালয়া। এই প্রকল্পে বীরেন ভদ্রের সময়ের আবেগ থাকছে, আরও অনেক কিছু থাকছে যার ক্ষয় নেই। কিন্তু সেগুলো আধুনিক রূপে। এআই এবং ভিজ্যুয়াল এফেক্টস দ্বারা তৈরি এই মহালয়ার প্রথম ঝলক ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সাড়াও পেয়েছেন নির্মাতারা। প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেখে ফেলেছেন সেই ঝলক।
রবিভোরে অভিনব
পরিচালক সৌরভ দাস এবং প্রযোজক সৌমি দত্ত রায় জানান, তাঁদের এই মহালয়ায় দুর্গার মুখের আদল বানানো হয়েছে তাঁদেরই এক ছাত্রীর মুখের আদলে, যাঁর নাম অদ্বিতীয়া মুখোপাধ্যায়। আর মহাদেবের মুখ তৈরি করা হয়েছে এক ছাত্রের মুখের আদলে। কোনও সাবস্ক্রিপশন ছাড়া ইউটিউব চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়া পেজে দেখানো হবে সেই মহালয়া। এ আই বনাম হিউম্যান ব্রেন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বর্ধমানের গলিতে বসে রাত জেগে সৌরভ আর সৌমিরা এঁকে ফেলেছেন পুরানের যুদ্ধ ‘ এ আই মহালয়া’। যার নাম ‘শক্তি’। রবিভোরেই যার রিলিজ।