লোকসভা ভোটের আগে জেলা স্তরে রদবদল করল তৃণমূল, সরানো হল জেলবন্দি অনুব্রতকে

লোকসভা ভোটের আগে জেলা স্তরে সাংগঠনিক রদবদল করল তৃণমূল। সোমবার সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। জেলার নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম। তালিকায় আবার অনেক নতুন নামকে জায়গাও দেওয়া হয়েছে। যেমন, বীরভূমের জেলা সভাপতির তালিকায় নাম নেই অনুব্রত মণ্ডলের। অন্য দিকে, কৃষ্ণনগরে সাংগঠনিক জেলায় সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। একই সঙ্গে, দলের সম্পাদক পদে চার জনের নামও সোমবার প্রকাশ করেছে তৃণমূল।

তৃণমূলের নতুন তালিকায় বীরভূমে জেলায় কোনও সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই জেলায় দলের চেয়ারম্যান করা হয়েছে রামপুরহাটের বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এখন বীরভূম জেলার কোর কমিটি এবং জেলা কমিটির সমন্বয় ভাবে সভাপতির কাজ সামলাবে। আগে সাত জনের কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাতে আরও দু’জন যুক্ত হন। আশিস ছাড়াও কোর কমিটিতে রয়েছেন বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, বোলপুর লোকসভার সাংসদ অসিত মাল, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় এবং তৃণমূল নেতা কাজল শেখ, সুদীপ্ত ঘোষ এবং বিশ্ববি়জয় মান্ডি।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বদল এনেছে তৃণমূল। সেখানে আগে সভাপতি ছিলেন আবু তাহের খান। অসুস্থতার কারণে তাঁকে সরিয়ে ওই পদে আনা হয়েছে অপূর্ব সরকার (ডেভিড)-কে। ওই জেলার শাওনি সিংহ রায়কে দলের রাজ্য সম্পাদক করেছে তৃণমূল। জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলায় সভাপতি পদে সাংসদ খলিলুর রহমানকে রেখে দিলেও চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক জাকির হোসেনকে।

বাঁকুড়ার সংগঠনেও বড়সড় রদবদল করেছে তৃণমূল। ওই জেলার সভাপতি পদ থেকে দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় আনা হয়েছে তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তীকে। অন্য দিকে, বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার জেলা সভাপতি পদে আনা হয়েছে বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। ওই পদে ছিলেন বড়জোড়ার বিধায়ক অলোক মুখোপাধ্যায়।

দার্জিলিং (পাহাড়) সাংগঠনিক জেলায় রাজ্যসভার প্রাক্তন সদস্য শান্তা ছেত্রীকে সভাপতি করেছে ঘাসফুল শিবির।

আরামবাগ সাংগঠনিক জেলায় তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদে বদল করেছে তৃণমূল। নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে স্বপন নন্দীকে। এর আগে ওই দায়িত্বে ছিলেন জয়দেব জানা।

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত সাংগঠনিক জেলার চেয়ারপার্সন পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তপতী দত্তকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রত্না বিশ্বাসকে। বসিরহাট সাংগঠনিক জেলায় দুই পদে ওলটপালট করেছে তৃণমূল। সেখানে চেয়ারম্যান থেকে হাজি নুরুল ইসলামকে সভাপতি করা হয়েছে। ওই জেলার সভাপতি ছিলেন সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে করা হয়েছে চেয়ারম্যান।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি হলেন সুভাষ ভাওয়াল। আগে সভাপতি ছিলেন মৃণাল সরকার। ওই জেলার নতুন চেয়ারম্যান করা হয়েছে কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডলকে। ওই জায়গায় ছিলেন নিখিল বর্মন। পূর্ব বর্ধমান জেলার চেয়ারম্যান বদল করেছে তৃণমূল। অশোক বিশ্বাসের জায়গায় আনা হয়েছে মঙ্গলকোট বিধানসভার বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীকে।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি থেকে সরানো হয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে। তাঁকে দলের রাজ্য সম্পাদক করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ ছাড়া ওই জায়গায় দলের জেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত করা হয়েছে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা পীযূষ ভুঁইয়াকে। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন চিত্ত মাইতি। বদল করা হয়েছে কাঁথি সাংগঠনিক জেলাতেও। জেলা সভাপতি ছিলেন তরুণ মাইতি। তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পীযূষকান্তি পাণ্ডাকে। আগের চেয়ারম্যানের মৃত্যু হওয়ায় তরুণকে সেই দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঘাটাল সাংগঠনিক জেলাতে তৃণমূলের চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়েছে। সেখানে অমল পাণ্ডাকে সরিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সদস্য শঙ্কর দোলইকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। সভাপতি হিসাবে রাখা হয়েছে আশিস হুদাইতকে। অন্য দিকে, মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হিসেবে সুজয় হাজরা এবং চেয়ারম্যান হিসেবে খড়্গপুর গ্রামীণের বিধায়ক দিনেন রায় উপর আস্থা রেখেছে দল। সেখানে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। মেদিনীপুর ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, হাওড়া, এবং বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় কোনও বদল আনেনি তৃণমূল।

দলের রাজ্য সম্পাদক পদে শাওনি, সৌমেনের পাশাপাশি কানাই মণ্ডল এবং মৃদুল গোস্বামীকে এনেছে তৃণমূল। কানাই মুর্শিদাবাদ জেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। আলিপুরদুয়ারের চেয়ারম্যান ছিলেন মৃদুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.