পাঁচ বছর পরে ফের চিনা বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ডোভাল, নজরে এলএসির সামগ্রিক পরিস্থিতি

চার বছর আগে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার রক্তাক্ত স্মৃতি এখনও পুরোপুরি ফিকে হয়নি। তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি)-র ‘টহলদারির সীমানা’ নির্ধারণ এবং মুখোমুখি অবস্থান থেকে সেনা পিছোনোর (ডিসএনগেজমেন্ট) বিষয়ে গত মাসে সমঝোতায় এসেছে নয়াদিল্লি এবং বেজিং। এই আবহে মঙ্গলবার চিনা বিদেশমন্ত্রী তথা বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত কমিশনের প্রধান ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করতে বেজিং পৌঁছেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পরে এই প্রথম বার মুখোমুখি বৈঠক করছেন ডোভাল-ওয়াং। ‘টহলদারির সীমানা’ নির্ধারণ এবং ডিসএনগেজমেন্টের পালা শেষ হলেও এখনও পূর্ব লাদাখের এলএসিতে দু’পক্ষেরই বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হিমালয়ের উচ্চ পর্বতক্ষেত্রে ভারতীয় সেনা এবং চিনা পিপল্‌স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র সংখ্যা কমানোর (ডিএসক্যালেশন) বিষয়ে দুই নেতার আলোচনা হবে বলে বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর। যদিও সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, সামগ্রিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক বিষয়গুলি আলোচনা করতেই চিন সফরে গিয়েছেন ডোভাল।

গত ২১ অক্টোবর বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন পূর্ব লাদাখের এলএসিতে বিবাদ নিরসনের বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক ঐকমত্য হয়েছে। এর পর চিনা বিদেশ দফতরের মুখপাত্র লিন জিয়ান একই কথা জানান। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রাশিয়ার কাজ়ানে ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির (ভারত, রাশিয়া, চিন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা) শীর্ষবৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সীমান্ত পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। এ বার ডোভাল-ওয়াং বৈঠকে লাদাখের পাশাপাশি উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ জুড়ে বিস্তৃত মোট ৩৪৮৮ কিলোমিটার এলএসির বিভিন্ন ‘মতবিরোধের ক্ষেত্র’গুলি নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এলএসি পেরিয়ে পূর্ব লাদাখের বিভিন্ন এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল চিনা ফৌজের বিরুদ্ধে। উত্তেজনার আবহে ওই বছরের ১৫ জুন গালওয়ানে চিনা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২০ জন ভারতীয় সেনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় জওয়ানদের পাল্টা হামলায় বেশ কয়েক জন চিনা সেনাও নিহত হয়েছিলেন। গালওয়ানকাণ্ডের পর থেকেই কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে বৈঠক শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চুশুল-মলডো পয়েন্টে দুই সেনার কোর কমান্ডার স্তরের বৈঠকে এলএসির কিছু এলাকায় ডিসএনগেজমেন্ট কার্যকর হয়েছিল। চলতি বছরের নভেম্বরে সমাপ্ত হয় সেই প্রক্রিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.