নীরব প্রস্তুতি সেরে নিয়ে দলকে বাক্‌সংযম-বার্তা পদ্ম নেতৃত্বের, এসআইআর-দ্বন্দ্বে মমতাকে ‘হাতিয়ার’ দিতে চায় না বিজেপি

ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) নিয়ে প্রকাশ্য ‘রাজনৈতিক বিবৃতি’ থেকে বিরত থাকার জন্য রাজ্য বিজেপিকে বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এসআইআর হলে ভোটার তালিকা থেকে কত নাম বাদ যাবে, তাতে কোন দল সমস্যায় পড়বে, সে সব বিষয়ে বাংলার বিজেপি নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। সে সব মন্তব্য এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘পবিত্রতা’কে প্রশ্নের মুখে ফেলবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য বিজেপিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। এ বার রাজ্যে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা, শুধুমাত্র সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে মন দিতে হবে। বুথ স্তরের প্রস্তুতি সম্পর্কে ‘রাজনৈতিক কথাবার্তা’ বলার থাকলে নেতৃত্বের সঙ্গে একান্তে বলতে হবে।

মাস পাঁচেক আগেই বঙ্গ বিজেপিতে নতুন করে ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ শুরু হয়। সেই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য যে ছিল এসআইএর-এর জন্য দলকে প্রস্তুত করে নেওয়া, সে কথা বিজেপি নেতারা কখনও প্রকাশ্যে বলেননি। কিন্তু প্রতিটি বুথেই কমিটিতে বুথস্তরীয় প্রতিনিধি (বিএলএ-২) পদে একজনের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। যা আসলে এসআইআর-এ অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি।

বৃহস্পতিবার বিজেপির রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন প্রভারী ও সহ-প্রভারী ভূপেন্দ্র যাদব এবং বিপ্লব দেব সেই বুথস্তরীয় প্রস্তুতির হিসাব বুঝে নেন। কিন্তু বিজেপির রাজ্য দফতরে আয়োজিত সেই বৈঠকের শুরুতেই তাঁরা বার্তা দেন যে, এই বিষয়ে বৈঠকে কোনও ‘রাজনৈতিক আলোচনা’র দরকার নেই। শুধু সাংগঠনিক প্রস্তুতির হিসাবটুকু দিলেই চলবে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসাবে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ভূপেন্দ্র-বিপ্লব ছাড়াও ছিলেন সুনীল বনসল এবং অমিত মালবীয়। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে শমীক ভট্টাচার্য, শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, রাহুল সিংহেরা তো ছিলেনই। দুই সংগঠন সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন। নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য দলে যে সব ‘টিম’ গড়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলির আহ্বায়কদের ডাকা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট ‘টিম’গুলির অন্য সদস্যদের অংশগ্রহণ ঐচ্ছিক হলেও অধিকাংশই হাজির হন। ফলে উপস্থিতির বহর বড় ছিল। অত জনের উপস্থিতিতে এসআইআর নিয়ে কোনও রাজনৈতিক চর্চা চাননি কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই শুরুতেই ভূপেন্দ্র বলে দেন, প্রত্যেকে যেন নিজের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দেন। কোনও রাজনৈতিক আলোচনার দরকার নেই। কারও কোনও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ বলার থাকলে পরে বনসলকে একান্তে বলতে পারেন। বুথস্তরে সংগঠনের পরিস্থিতি বোঝার মাধ্যমেই বিএলএ-২ নিয়োগের হিসাবও বুঝে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ভোটার তালিকাকে ‘স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত’ করতে বিএলএ-রা কী করবেন, কোন কৌশল নেবেন, সে সব আগেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারেই এসআইআর-এর বিরুদ্ধে আবার সুর চড়িয়েছেন। মমতার হুঁশিয়ারিতে সংঘাতের বার্তা স্পষ্ট। এসআইআর প্রক্রিয়ার ‘যৌক্তিকতা এবং স্বচ্ছতা’ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন। তাই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাবধানি। এসআইআর নিয়ে বিজেপি নেতাদের কোনও প্রকাশ্য মন্তব্য মমতার ‘হাতিয়ার’ হোক, তা তাঁরা চাইছেন না। তাই এসআইআর-এ রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপি কর্মীদের যে ভূমিকা থাকার কথা, তার বাইরের কোনও বিষয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য না করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বাকি সব বিষয় নির্বাচন কমিশনের উপরে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও এসআইআর প্রক্রিয়া পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে শুক্রবার নতুন করে কিছু বলেননি। মুখ্যমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিধায়কদের নিয়ে তিনি শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধী দলনেতা। তবে এসআইআর প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি কী ভাবে পরিচালিত হবে, সে সব বিষয়ে শুভেন্দু শুক্রবার আর কিছু বলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.