জামিনে মুক্তি পেয়েই ছলছল চোখ, হাত ধরে নিয়ে গেলেন স্ত্রী, একটি শব্দও বললেন না অভিজিৎ

গোলাপি জামার উপর হাতকাটা কালো জ্যাকেট। চশমায় ঢাকা চোখ ছলছল। এই বুঝি দাড়ি কামানো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু’-এক ফোটা! জামিন পাওয়ার পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতের নীচে অপেক্ষায় অভিজিৎ মণ্ডল। পাশে হাতটা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে স্ত্রী। আদালতের নির্দেশে প্রায় ৯০ দিন পরে জেলমুক্তি হয়েছে আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত টালা থানার প্রাক্তন ওসির। চোখেমুখে ফুটে উঠেছে বিধ্বস্ত ভাব। যদিও জেলবাস বা জামিন নিয়ে একটি কথাও বললেন না অভিজিৎ। আদালত থেকে বেরিয়ে সোজা উঠে পড়লেন আইনজীবীর গাড়িতে।

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর অভিজিৎকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ওই একই অভিযোগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও হেফাজতে নিয়েছিল সিবিআই। যদিও তার আগেই আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল সন্দীপকে। গ্রেফতারির ৯০ দিন পরে শুক্রবার সিবিআই আদালতে জামিন পেলেন অভিজিৎ। বিকেলে রায় ঘোষণার সন্ধ্যায় আদালতের নীচে দেখা গেল অভিজিৎকে। পাশে স্ত্রী এবং পুলিশে তাঁর সহকর্মী, ব্যাচমেটরা। অভিজিতের চোখ ছলছল। মাঝেমধ্যে এ দিক, ও দিকে চেয়ে দেখেন। তবে তিনি একটি কথাও বলেননি। সন্ধ্যা নাগাদ স্ত্রীর সঙ্গে নিজের আইনজীবীর গাড়িতে উঠে পড়েন টালা থানার প্রাক্তন ওসি। মনে করা হচ্ছে, নিজের বাড়িতে গিয়েছেন তিনি।

অভিজিৎকে গ্রেফতারের পরে সিবিআই আদালতে দাবি করেছিল, আরজি করে দেহ উদ্ধারের দিন বেশ কয়েক বার ফোনে কথা বলেছিলেন সন্দীপ এবং অভিজিৎ। তাঁদের ফোন থেকে কিছু ‘তদন্তসাপেক্ষ’ ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থার আরও দাবি, ঘটনা চাপা দিতে ধৃতদের মোবাইল থেকে বেশ কিছু ফোনকলও করা হয়েছিল। কয়েক জন সাক্ষীকে ফোন করেছিলেন তাঁরা। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চেয়ে দু’জনের জামিনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও গ্রেফতারির ৯০ দিনের মাথায় সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে আদালতে, আরজি করে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় এখন সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিতে পারবে না তারা। দ্রুত গতিতে তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হবে। সিবিআইয়ের এক আধিকারিক এ-ও জানিয়েছেন, জামিন পেয়েছেন মানে তদন্ত শেষ হয়নি। অভিজিতের আইনজীবী মহম্মদ সাজিদ বলেন, ‘‘গ্রেফতারির পরে ৯০ দিন হয়ে গিয়েছে, সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়নি। সিবিআই বার বার বলছে, এখনও তদন্ত চলছে। তার অর্থ, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও প্রমাণ মেলেনি।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.