১২ বছর পর ঘরের মাঠে সিরিজ় হার ভারতের, তিন দিনেই খেলা শেষ! এ দেশে প্রথম সিরিজ় কিউয়িদের

ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ় হার ভারতের। ১২ বছর পর ঘরের মাঠে হারল তারা। শনিবার পুণেতে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত হারল১১৩ রানে। প্রথম টেস্টে বেঙ্গালুরুতে হেরেছিল তারা। একটি ম্যাচ বাকি থাকতেই তিন ম্যাচের সিরিজ় জিতে নিল নিউ জ়িল্যান্ড। এই প্রথম বার ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ় জিতল তারা। শেষ ম্যাচ মুম্বইয়ে।

এর আগে ভারতের মাটিতে নিউ জ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দল খেলতে এসে স্পিন সামলাতে পারেনি। কিন্তু কিউয়িদের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটারদেরই দেখা গেল স্পিনের বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হতে। পুণে টেস্টে নিউ জ়িল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনার দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ১৩টি উইকেট।ভারতীয় ব্যাটারেরা কখনও লাইন ফস্কালেন, কখনও ডিফেন্স করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন।

দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে নিউ জ়িল্যান্ড ২৫৯ রান করেছিল। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৫৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জ়িল্যান্ড তোলে ২৫৫ রান। ভারতের লক্ষ্য ছিল ৩৫৯ রান। কিন্তু ২৪৫ রানে শেষ ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ১১৩ রানে হারল তারা।

পুণেয় ভারতের হারের ম্যাচে সমালোচিত বিরাট কোহলিও। প্রথম ইনিংসে ফুলটস বলে আউট হন তিনি। স্যান্টনারের বল যে ভাবে ফস্কালেন তা দেখে অবাক সকলে। স্পিনারদের বিরুদ্ধে বিরাট সে ভাবে খেলতে পারছেন না। এশিয়ায় গত তিন বছরে কোহলি স্পিনারদের বিরুদ্ধে এই ম্যাচের আগে মাত্র ৬০৬ রান করেছেন। গড় মাত্র ২৮.৮৫। টেস্ট ক্রিকেটে নয় হাজারের বেশি রান থাকা ব্যাটারের পক্ষে যা বেশ লজ্জার পরিসংখ্যান। সঞ্জয় মঞ্জরেকর সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “বিরাট নিজেই বুঝতে পারবে যে, ক্রিকেটজীবনের সবচেয়ে খারাপ শট খেলে আউট হয়েছে। ওর জন্য খারাপ লাগতে বাধ্য। কারণ সব সময়েই মাঠে কিছু করার খিদে নিয়ে মাঠে নামে ও।”

কোহলিকে ছেড়ে কথা বলেননি অনিল কুম্বলেও। ভারতের প্রাক্তন কোচ এবং অধিনায়কের মতে, কোহলির উচিত ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা। বলেছেন, “কোনও ম্যাচের একটা-দুটো ইনিংস হলেও ও সাফল্য পেত। অনুশীলনের থেকে অনেক বেশি কার্যকরী কোনও ম্যাচ খেলা। বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকা যায়। কোহলি যদি মনে করে ঘরোয়া ক্রিকেটে ওর খেলা উচিত এবং দল যদি অনুমতি দেয় তা হলে নিশ্চয়ই খেলতে পারে। তবে আমার মনে হয় না স্পিনের বিরুদ্ধে ওর ব্যর্থতার এটাই একমাত্র কারণ।”

এ বারের সফরের আগে ভারতের মাটিতে মাত্র দু’টি টেস্ট জিতেছিল নিউ জ়িল্যান্ড। লাথামের দল এ বারই দু’টি টেস্ট জিতে নিল। বেঙ্গালুরুতে হারের পর ভারত ওয়াশিংটন সুন্দরকে দলে এনেছিল। নিউ জ়িল্যান্ড দলে পাঁচ জন বাঁহাতি ব্যাটার। সেই কারণে ওয়াশিংটনকে দলে নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা কাজেও লাগে। তিনি প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট তুলে নেন। কিন্তু ৭ উইকেটের বদলা ৭ উইকেটেই নেন স্যান্টনার। স্পিন আক্রমণে ভারতকে সমানে সমানে টক্কর দিল কিউয়িরা। নিজেদের অস্ত্রেই ঘায়েল ভারত। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যে নিউ জ়িল্যান্ড স্পিনের বিরুদ্ধে নাস্তানাবুদ হয়েছিল, তারাই ভারতকে ভারতের মাটিতে হারিয়ে দিল।

পুণে টেস্টে ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ৩৫৯ রান। সেই সময় সম্প্রচারকারী চ্যানেলে বার বার ২০০৮ সালের চেন্নাই ম্যাচের স্কোরবোর্ড দেখানো হচ্ছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ভারত চতুর্থ ইনিংসে ৩৮৭ রান তাড়া করে জিতেছিল। ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর কি সাজঘরে সেই টেস্টের উদাহরণ দিয়ে রোহিতদের বলেছিলেন, ৩৫৯ রান তাড়া করা সম্ভব? ২০০৮ সালের ম্যাচটিতে গম্ভীর খেলেছিলেন। চতুর্থ ইনিংসে চেন্নাইয়ের ঘূর্ণি পিচে ১৩৯ বলে ৬৬ রান করেছিলেন। আর উল্টো দিকে দেখেছিলেন বীরেন্দ্র সহবাগকে ৬৮ বলে ৮৩ রান করতে। ৩৫৯ রান তাড়া করতে নেমে শনিবার রোহিত শর্মা এবং যশস্বী জয়সওয়াল আগ্রাসী ক্রিকেটই খেলছিলেন। কিন্তু সহবাগ-গম্ভীরের মতো জুটিটা গড়তে পারেননি। চার নম্বরে নেমে ২০০৮ সালে সচিন তেন্ডুলকর শতরান করেছিলেন। কিন্তু শনিবার চার নম্বরে বিরাট থেমে গেলেন ১৭ রানে। চেন্নাই টেস্টে জয়ের নেপথ্যে ছিলেন যুবরাজ সিংহও। তিনি ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। শনিবার কেউ যুবরাজ হয়ে উঠতে পারলেন না। ম্যাচের মাঝে ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী বলেন, “দুই দলের মধ্যে অনেক তফাত। ওই ম্যাচে শুরুটা করেছিল সহবাগ, শেষ করেছিল যুবরাজ। যশস্বীরা সেই কাজটা পারবেন কি?”

ম্যাচ শেষে ভারতের প্রাক্তন কোচ উত্তর পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আগামী দিনে স্পিনের বিরুদ্ধে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়লে ম্যাচ জেতার উত্তর পাবেন রোহিতেরা? মুম্বই টেস্টেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। সেই মাঠেই যে অজাজ পটেলের ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার নজির রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.