ফোনে আড়িপাতা: সংসদে আলোচনা চান বিরোধীরা, অ্যাপলের প্রতিনিধিদেরও তলবের দাবি

মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের আইফোন ‘হ্যাক’ করার অভিযোগ ওঠার পরে এ বার বিরোধী সাংসদেরা সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনার দাবি তুললেন। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধী দলের সাংসদরা আজ দাবি তুলেছেন, এ নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হোক। সেখানে অ্যাপল সংস্থার প্রতিনিধিদেরও ডেকে পাঠানো হোক।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ এ নিয়ে সরব হয়েছেন। নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাঁচ-ছয় জন সাংসদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে। সবাইকে নোটিস পাঠিয়েছে। আমার বলতেও লজ্জা লাগে, আমাদের দেশ সম্পর্কে বাইরের লোকের কী ধারণা হবে! আমাদের কথা বাইরের কেউ তো শুনছে। তারা কী ভাববে। এটা আমাদের মাতৃভূমি। দেশের স্বার্থের কথা ভেবে চুপ করে থাকি। আমরা যতটা পারব সহ্য করব।’’

গত কাল রাহুল গান্ধী থেকে শশী তারুর, সীতারাম ইয়েচুরি থেকে প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী, সুপ্রিয়া সুলে থেকে মহুয়া মৈত্রের মতো বিরোধী নেতানেত্রীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, তাঁদের ফোন হ্যাক করা হচ্ছে বলে আইফোন নির্মাতা সংস্থা অ্যাপল-এর থেকে তাঁরা সতর্কবার্তা পেয়েছেন। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারেরাই এই কাজ করছে এবং কে, কী করেন, তা দেখেই ফোন হ্যাক করার চেষ্টা হচ্ছে।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনার দাবি প্রসঙ্গে কমিটির চেয়ারম্যান, বিজেপির শরিক একনাথ শিন্দের শিবসেনার সাংসদ প্রতাপরাও যাদব অবশ্য জানিয়েছেন, ভাবনাচিন্তা চলছে। কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তহয়নি। কমিটির কোনও সদস্য এ বিষয়ে সরব হলে তখন আলোচনা হবে। তার আগেই বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে যুক্তি দিয়েছেন, সংসদীয় কমিটির অধিকার নেই আ্যাপল-এর সতর্কবার্তা নিয়ে আলোচনা করার। বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। দুবে নিজেও কমিটির সদস্য। ওই কমিটিরই সদস্য মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে তিনি ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ তুলেছেন।

মহুয়া নিজেও অ্যাপল-এর সতর্কবার্তা পেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে দাবি তুলেছেন, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জবাবদিহি চাওয়া হোক। বিজেপি সূত্রের পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

আজ অবশ্য কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরম, সিপিএমের জন ব্রিট্টাস কমিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছেন। কমিটির সদস্য, তৃণমূল সাংসদ জহর সরকার বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থাকে দিয়ে বিরোধীদের উপরে হ্যাকিং আক্রমণ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিশেষ বৈঠক ডাকার দাবি জানাচ্ছি। আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের ফোনে পেগাসাস হামলা হয়েছে।’’ দেশের মানুষের আধার তথ্য ফাঁস হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন জহরবাবু।

নিশিকান্ত পাল্টা যুক্তিতে বলেছেন, সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে চাপ তৈরি করে দেশ চলে না।তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির প্রধান এখন আর শশী তারুর নন, রাহুল গান্ধী সেই কমিটি চালান না।

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব প্রথমেই বলে দিয়েছেন, কেন্দ্রকে নিশানা করার জন্যইবিরোধীরা হ্যাকিং নিয়ে সরব। তাহলে আর সরকারি তদন্তে কী হবে! আর এ ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধেই হ্যাকিং করার অভিযোগ। ফলে সংসদীয় কমিটিরহস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের সংস্থা সার্ট-ইন(ইন্ডিয়ান কম্পিউটার এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম) সেপ্টেম্বর মাসেই সতর্কবার্তা জারি করে বলেছিল, অ্যাপল-এর আইফোন, আইপ্যাড ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিজেপি আবার এই গোটা কাণ্ডে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছে।

বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ের দাবি, ধনকুবের জর্জ সোরোস ও দেশের বিরোধী নেতানেত্রীদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। তার ভিত্তিতেই তাঁরাফোনে হ্যাকিংয়ের অভিযোগ তুলেছেন। সোরোসের সংগঠনের বিরুদ্ধে আগেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। মালবীয়ের দাবি, ‘অ্যাকসেস নাও’ নামের সংস্থা থেকে আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে হ্যাকিংয়ের সতর্কবার্তা এসেছে। ওই সংস্থা সোরোসের অনুদানে চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.