আধার কার্ড নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ হতে পারে না। বিহারের রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচন কমিশনকে এই নিয়ে নির্দেশ দেওয়ার জন্য যে দাবি তুলেছিল, তা খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, আইন অনুসারে আধারের মর্যাদা নির্ধারিত হয়েছে। সেই মর্যাদা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) সংক্রান্ত মামলায় এর আগে জানিয়েছিল, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য অন্য নথির সঙ্গে আধার কার্ডও পরিচয়পত্র হিসাবে গণ্য করা হতে পারে। সোমবারের শুনানিতে তা আরও স্পষ্ট করে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘যাচাইয়ের জন্য অনেক নথির মধ্যে আধারও একটি নথি হতে পারে।’’
বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ লোকের নাম বাদ যাওয়া নিয়ে মামলা শুনছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট এর আগে জানায়, ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অভিযোগ জানাতে পারবেন ভোটারেরা। তালিকায় নাম বাদ পড়া নিয়ে অভিযোগ জানানোর সময়সীমা বৃদ্ধি করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল বিহারের বিরোধী দলগুলি। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদন শোনে বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। লালুপ্রসাদ যাদবের দল আরজেডির হয়ে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। তিনি সওয়াল করে জানান, বিহারে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষের নাম বাদ গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থাকলেও আধারকে পরিচয়ের একমাত্র প্রমাণ হিসাবে ধরা হচ্ছে না। তার পরেই ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আধার আইনে আধারকে যে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, তা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। পুত্তস্বামী নির্দেশে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ আধার নিয়ে যে কথা বলেছে, তার অন্যথাও করতে পারব না।’’
আধার আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আধার নম্বর বা অথেনটিকেশন ধারকের নাগরিকত্ব বা বাসস্থলের প্রমাণ হবে না। অন্য দিকে, ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ পুত্তস্বামী মামলায় জানিয়েছিল, আধার নম্বর কারও নাগরিকত্বের অধিকার অধিষ্ঠিত করতে পারে না।
এসআইআর সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিহারের বিরোধী দলগুলির আইনজীবীরা বার বার সওয়াল করেছেন, যে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য একমাত্র আধারকেই প্রমাণ হিসেবে ধরা হোক। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আধারে এত জোর দেওয়া হচ্ছে কেন? নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ আধার— আমরা কখনওই সেই নির্দেশ দেব না।’’
নির্বাচন কমিশনের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেছে রাকেশ দ্বিবেদী। তিনি সওয়াল করে জানান, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য আধারকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহারের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। তার কারণ, বিহারের কিছু জেলায় আধারের সম্পৃক্তি পৌঁছেছে ১৪০ শতাংশে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করা হয়েছে যে, বহু বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা অবৈধ ভাবে এ দেশে প্রবেশ করে আধার কার্ড করিয়েছেন কিছু রাজ্যে।
বিহারে খসড়া তালিকা থেকে যে ভোটারদের নাম ভুল ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের খুঁজে সাহায্য করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট রাজনৈতিক দলগুলির কর্মীদের সক্রিয় হতে বলেছে।