শুক্রবার আইএসআই-এর কলকাতা ক্যাম্পাসে হলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল এডুকেশন সেন্টার (আইএসইসি)-র ৭৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। এই মর্যাদাপূর্ণ ১০ মাসের ডিপ্লোমা কোর্স “মঙ্গোলিয়া থেকে জিম্বাবোয়ে”, তথা উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে আগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরিচালনা করা হয়।
ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো জানিয়েছে, পাঠ্যক্রমটি কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ মন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রকের আওতাভুক্ত। যাঁরা আর্থিকভাবে দুর্বল অথচ যোগ্য, তাঁদের জন্য জলপানির ব্যবস্থাও রয়েছে।
এই বছরে বুরুন্ডি, ফিজি, মরিশাস, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, নাইজার, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা, ভেনেজুয়েলা ও জিম্বাবোয়ে—এই দেশগুলির ১৯ জন ছাত্রছাত্রী পাঠ্যক্রমে অংশ নেন। এর মধ্যে ১৮ জন পড়ুয়া সমাবর্তনে উপস্থিত থেকে তাঁদের ডিপ্লোমা নেন।
ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর অধীনে চলা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল এডুকেশন সেন্টার (আইএসইসি) ১৯৫০-এ সৃষ্টি হয়। উদ্দেশ্য, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের পরিসংখ্যান শাস্ত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া। বর্তমানে, এটি ভারত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে দক্ষতা বিনিময়ের এক বিশেষ মঞ্চ। বিদেশ মন্ত্রকের ইন্ডিয়ান টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কো-অপারেশন (আইটিইসি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে এই পাঠ্যক্রমটি হয়। এতদিনে ৮৬টি দেশের ১৭২৮ জন পড়ুয়া এই পাঠ্যক্রম থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
অনুষ্ঠান শুরু হয় আইএসআই ক্লাবের সদস্যদের সম্মিলিত অগ্রগতির বার্তা-সমন্বিত বৈদিক মন্ত্র পাঠ দিয়ে। আইএসইসি-র পরিচালন পর্ষদের চেয়ারম্যান ডঃ এস পি মুখার্জি অনুষ্ঠান শুরু করেন। এরপর আইএসআই-র ডিরেক্টর অধ্যাপিকা সংঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি পড়ুয়াদের সারা বিশ্বে আইএসআই-এর ‘ভালো কাজ’-এর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বলেন।
আইএসইসি-র সদস্য সচিব ডঃ মোহম্মদ জাফর আনিস বলেন, এই কেন্দ্র বহুদিন ধরেই কঠোর শিক্ষামূলক প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তিনি জানান, আইএসইসি বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের নানা দেশের পড়ুয়াদের জন্য নানা বিষয় ও সময়সীমা অনুযায়ী বিশেষ পাঠ্যক্রম পরিচালনা করে, যা ভারত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করছে।
মূল ভাষণে, কেন্দ্রীয় সচিব ডঃ সৌরভ গর্গ বলেন, তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ‘ডেটা লিটারেসি’ বা তথ্যের ভাষা জানা আজকের দিনে খুব দরকার। ‘আধার’-এর উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝান কীভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি জনসেবা পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে। কৃষিক্ষেত্র-সহ বিভিন্ন কাজে জিওস্পেশিয়াল প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তিনি আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, গত বছর ভারতের উদ্যোগে জাতিসংঘ পরিসংখ্যান কমিশনের সদস্যসংখ্যা ২৪ থেকে ৫৪-তে বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে তৃতীয় বিশ্ব অনেক উপকার পাবে।
অনুষ্ঠানে ডিপ্লোমা ও ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ডঃ গর্গ নিজে হাতে পড়ুয়াদের পুরস্কৃত করেন। এই বছর প্রথমবার প্রথম স্থান অধিকার করার জন্য একটি বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়, যা অধ্যাপক মুখার্জির হাত থেকে জিম্বাবোয়ে-র জেমস নামাডে গ্রহণ করেন।
সর্বশেষে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বার্তা বহনকারী এই শিক্ষার উৎসবের পরিসমাপ্তি ঘটে।