মোরবীকাণ্ডের ৩ বছর পরে গুজরাতে আবার একটি সেতু বিপর্যয়। এ বার ঘটনাস্থল বডোদরা। বুধবার সকালে মহিসাগর নদীর উপর ভেঙে পড়ে গম্ভীরা সেতু। দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। আহত বেশ কয়েক জন। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে হইচই শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই স্থানীয়েরা আঙুল তুলেছেন প্রশাসনের দিকে। অভিযোগ, ৪০ বছরের পুরনো সেতুটির দেখভাল ঠিক ভাবে করা হয়নি। প্রবল যানজট হত সেতুতে। যান চলাচলের জন্য ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছিল। কিন্তু একাধিক বার প্রশাসনকে জানিয়েও লাভের লাভ কিছু হয়নি।
সেতু বিপর্যয়ের পর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেল জানিয়েছেন প্রশাসনের সক্রিয়তার কথা। তিনি জানান, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বডোদরার কালেক্টরের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদ্ধারকাজে যাতে কোনও খামতি না-থাকে সে জন্য তৎপর বডোদরা পুরসভার দমকলবাহিনী। ডুবুরি নামিয়ে আহতদের খোঁজ চলছে। কাজ করছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, সেতু রক্ষণাবেক্ষণে খামতি ছিল প্রশাসনের। সেতুর দেখভাল ঠিকমতো হলে এই দিন দেখতে হত না।
মধ্য গুজরাতের সঙ্গে সৌরাষ্ট্রের যোগাযোগের অন্যতম ভরসা গম্ভীরা সেতু। তা ছাড়া, আনন্দ, বডোদরা, ভরুচ, অঙ্কলেশ্বরের স্থানীয় লোকজন দৈনন্দিন চলাচলের জন্য এই সেতু ব্যবহার করতেন।
প্রতি দিন প্রচুর গাড়ি চলাচল করত। তার মধ্যে ভারী পণ্যবাহী লরি যেমন থাকত, তেমনই ছিল ছোট-বড় গাড়ি। নিত্যদিন যানজট লেগে থাকত। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘গম্ভীরা সেতু দিয়ে যাতাযাত দিন দিন ভয়ের হয়ে উঠছিল। যানজট তো লেগেই থাকত। এখন ওই সেতু ‘সুইসাইড পয়েন্ট’! নিত্যদিন দুর্ঘটনা হয়। সেতুর অবস্থা নড়বড়ে। এ নিয়ে বার বার প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেননি কেউ।’
বুধবার দুর্ঘটনার সময়কার যে সব ছবি এবং ভিডিয়ো দেখা গিয়েছে, তা এককথায় ভয়ঙ্কর! দেখা যায়, সেতুর একটি গোটা অংশ নিমেষে ভেঙে নদীতে পড়ে। একের পর এক গাড়ি জলে পড়ে। একটি তেলের ট্যাঙ্কার সেতুর কোণে দাঁড়িয়ে বরাতজোরে রক্ষা পেয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ পেলাম। আমার চোখের সামনেই চার-চারটি গাড়ি নদীতে পড়ল। দুটো লরি, একটি বোলেরো এবং একটি পিক আপ ভ্যান সেতু থেকে পড়ল…।’’
বডোদরা প্রশাসন দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও মুখ খোলেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ নিয়েও কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে সেতু বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। ক্রেন, ডুবুরি লাগানো হয়েছে উদ্ধারকাজে। গুজরাতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হৃষীকেশ প্যাটেল অবশ্য দাবি করেছেন, রক্ষণাবেক্ষণে নজর দিয়েছিল সরকার। তিনি বলেন, ‘‘গম্ভীরা সেতু তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে। বিপর্যয়ের আসল কারণ খোঁজা হচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর রাজ্যে এই সেতু বিপর্যয় নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। মৃতদের জন্য শোকপ্রকাশ করেন। সমাজমাধ্যমে মোদী লিখেছেন, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে। আহতেরা পাবেন ৫০ হাজার করে টাকা।