আকারে পৃথিবীর ৩৫ গুণ। সম্প্রতি মহাকাশে তেমনই একটি বিশালাকায় গ্রহের খোঁজ পেয়েছে নাসা। নতুন কোনও নক্ষত্রমণ্ডলে নয়। চেনা পরিসর থেকেই তাকে পাওয়া গিয়েছে। এত দিন যে নক্ষত্রের জগতে দিনরাত নাসা নজর রাখত, সেখানেই ‘লুকিয়ে’ ছিল এই গ্রহ। কী ভাবে এত দিন সে নজরের আড়ালে ছিল, তা বিজ্ঞানীদের রোমাঞ্চিত করেছে।
সূর্য থেকে ১২৭৯ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে কেপলার ১৩৯ নামের একটি তারা। এর ভর সূর্যের চেয়ে ১০৮ গুণ বেশি। কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই নক্ষত্র এবং তার চারপাশের গ্রহগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। সম্প্রতি সেই কেপলার ১৩৯-এর সংসারেই মিলেছে নতুন গ্রহের খোঁজ। বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন কেপলার-১৩৯এফ। আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। কেপলার-১৩৯এফ নামের গ্রহটির ভর সেই নেপচুনের প্রায় দ্বিগুণ। পৃথিবীর চেয়ে এটি প্রায় ৩৫ গুণ বড়। নিজের নক্ষত্রটিকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে এই গ্রহের সময় লাগে ৩৫৫ দিন। অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্যাল জার্নাল লেটার্সে এই গ্রহের আবিষ্কারের কথা প্রথম প্রকাশ করা হয়েছে গত ২ মে।
নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশে গত ন’বছর ধরে সক্রিয়। প্রায় ৩০০০টি গ্রহ আবিষ্কার করেছে এই টেলিস্কোপ। কিন্তু কেপলার-১৩৯ নক্ষত্রের সংসারে প্রথম থেকেই ছিল নতুন গ্রহটি। এত দিনে এক বারও কেন নাসার ক্যামেরায় তার উপস্থিতি ধরা পড়ল না? বিজ্ঞানীরা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, কেপলার টেলিস্কোপের কাজের ধরনই এর মূল কারণ। সাধারণত, ক্যামেরায় যদি কোনও নক্ষত্রের আলো কিছু সময়ের জন্য নিভে আসতে বা আবছা হয়ে যেতে দেখা যায়, সেখান থেকে বিজ্ঞানীরা গ্রহের উপস্থিতি অনুমান করে নেন। নক্ষত্রের আলোয় গ্রহদের দেখা না গেলেও তাদের উপস্থিতিতে নক্ষত্রের আলো কিছুটা আবছা হয়ে যায়। এ থেকে গ্রহের আকার, দূরত্বের মতো তথ্যও বিজ্ঞানীরা জেনে নিতে পারেন। কিন্তু কেপলারের ক্ষেত্রে টেলিস্কোপ এবং ওই নক্ষত্রের মধ্যে তৈরি হওয়া সরলরেখার উপরে বা নীচে কোনও গ্রহ থাকলে তার উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এই নতুন গ্রহটি সেই কারণেই নজরে পড়েনি এত দিন।
কেপলার-১৩৯ নক্ষত্রের সংসারে তিনটি পাথুরে গ্রহ এবং একটি গ্যাস জায়ান্টের উপস্থিতি আগে থেকে জানত নাসা। কিন্তু তাদের কক্ষপথের মধ্যেকার দূরত্ব থেকেই আন্দাজ করা গিয়েছিল, আরও কোনও গ্রহ থাকতে পারে। এ বার সেই লুকিয়ে থাকা গ্রহটিই খুঁজে পাওয়া গেল।