২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাল রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশন। শনিবার তারা শীর্ষ আদালতে পুনর্বিবেচনার আর্জি করেছে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, আগামী ৮ মে ওই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে। ওই দিন মামলাটি শুনবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ। রায় ঘোষণার এক মাসের মাথায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করল এসএসসি। এর আগে সাংবাদিক বৈঠকে এসএসসি জানিয়েছিল, যোগ্য-অযোগ্যদের বাছাই করে আগের রায় পরিবর্তন বা নতুন রায়ের আবেদন জানানো হবে। সেইমতো তারা আবেদন করেছে।
নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতি এবং একাধিক অনিয়মের অভিযোগে গত ৩ এপ্রিল এসএসসির ২৬ হাজার (আদতে ২৫,৭৩৫) চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ অনিয়মের অভিযোগে ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করে দেয়। শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, সঠিক তথ্য না থাকায় যোগ্য এবং অযোগ্যদের পৃথকীকরণ করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করবে এসএসসি। দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্যদের বেতন ফেরত দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের কোনও অংশই এখনও অবধি কার্যকর করা হয়নি। এসএসসি এবং রাজ্য আগেই জানিয়েছিল, পুরো রায় খতিয়ে দেখে পুনর্বিবেচনার আর্জি (রিভিউ পিটিশন) করা হবে। সেইমতো সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাল রাজ্য। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে খবর, গত ৩ এপ্রিল এসএসসি মামলার রায় ঘোষণা করেছিল। আর ৩ মে রিভিউ পিটিশন করতে চেয়ে আবেদন করা হয়। রায় ঘোষণার ঠিক এক মাসের মাথায় রায়ে পরিবর্তন চেয়ে মামলা দায়ের করল রাজ্য এবং এসএসসি।
আগামী ১৩ মে প্রধান বিচারপতি খন্না অবসর নেবেন। তার আগে আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হতে পারে। পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ হতে পারে বলে মনে করছেন মূল মামলাকারীদের আইনজীবীরা। এই প্রসঙ্গে আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, ‘‘যে কারণে সুপ্রিম কোর্ট পুরো প্যানেল বাতিল করেছে, তাতে এই রায় পুনর্বিবেচনা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। পূর্বের রায়ই বহাল রাখতে পারে আদালত। এর আগে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আবেদন মেনে নিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেও এখন কেন রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি করতে হল? তা ছাড়া বেশির ভাগ মামলায় দেখা দিয়েছে, তথ্যগত বিভ্রান্তি বা ভুল থাকলে আদালত নিজের রায় পরিবর্তন করে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু নেই।’’
এর আগে রায়ে বদল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তাদের আবেদন ছিল, এত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হলে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। অনেক স্কুলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক শূন্য হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতি হবে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। গত ১৭ এপ্রিল পর্ষদের ওই আবেদন মেনে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। শর্তসাপেক্ষে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, দাগি অযোগ্যদের বাদ রেখে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকেরা স্কুলে যেতে পারবেন। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে। তবে ৩১ মে-র মধ্যে রাজ্যকে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরুর বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ওই নির্দেশ মোতাবেক চলতি মাসেই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কথা। তারই মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় রাজ্য।