প্রায় ৭২ ঘণ্টা ধরে সমুদ্রের উপর থেকে যে শক্তি সঞ্চয় করেছিল ঘূর্ণিঝড়, তা নিয়ে মায়ানমারে আছড়ে পড়েছে মোকা। সিতওয়াতে মোকার তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে চার দিক। ঘূর্ণিঝড়ের বলি হয়েছেন তিন জন। বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ঝড়ের বিধ্বংসী রূপ দেখা গিয়েছে। অবশেষে তার শক্তিক্ষয় হয়েছে।
রবিবার বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের উপকূলে আছড়ে পড়েছে মোকা। সোমবার মৌসম ভবন জানিয়েছে, মোকার কিছুটা শক্তিক্ষয় হয়েছে মায়ানমারে। এই মুহূর্তে তা মায়ানমারের কাছেই অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের দূরত্ব সিতওয়া থেকে ৪৫০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পশ্চিমে। মায়ানমারের ন্যায়ুং-উ থেকে ২৬০ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পূর্বে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ৪২০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর পূর্বে অবস্থান করছে মোকা।
শক্তিক্ষয় হলেও মোকা এখনও ঘূর্ণিঝড় রূপেই অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তার প্রভাবে এ বার পশ্চিমবঙ্গে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। মৌসম ভবন জানিয়েছে, যত দিন মোকা সমুদ্রের উপর ছিল, তত দিন তা স্থলভাগ থেকে সমস্ত জলীয় বাষ্প শুষে নিচ্ছিল। যে কারণে বাংলায় অস্বস্তিকর গুমোট গরম অনুভূত হয়েছে। কোথাও কোথাও তাপপ্রবাহের সতর্কতাও জারি করা হয়েছিল। তবে এ বার মোকা মায়ানমারে চলে যাওয়ার পর জলীয় বাষ্প ঢুকতে আর বাধা নেই। ফলে পশ্চিমবঙ্গে এ বার বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
আলিপুর হাওয়া অফিস রবিবার জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আগামী বুধবার থেকে। শুধু বৃষ্টি নয়, সেই সঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে সোমবারও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮২ সালের পর থেকে বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় তীব্রতম ঘূর্ণিঝড় এই মোকা। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ২৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এই ঝড়কে কেউ কেউ পূর্ব উপকূলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের আখ্যাও দিচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় ফণির সঙ্গে মোকার তুলনা টানা হচ্ছে। মায়ানমারে প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভেসে গিয়েছে। একাধিক গাছ উপরে পড়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিদ্যুতের খুঁটি, টাওয়ার হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন।