আলেকজ়ান্ডার জ়েরেভ, কোকো গফ, ড্যানিল মেদভেদেভ, হোলগার রুন, জেসিকা পেগুলা, কুইনওয়েন ঝেং, পাওলা বাদোসা— তালিকা অনেক লম্বা। গফ গত মাসেই ফরাসি ওপেন জিতেছেন। ঝেং আবার অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী। তাঁরা প্রত্যেকেই উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছেন। এ বারের উইম্বলডনের প্রথম দু’দিনেই প্রথম রাউন্ডে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে মোট ৬৪ বাছাই খেলোয়াড়ের মধ্যে ২৩ জন বিদায় নিয়েছেন। ওপেন এরায় কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামে প্রথম রাউন্ডে এত বাছাই খেলোয়াড় হারেননি। রেকর্ড গড়েছে অঘটনের উইম্বলডন।
এই ২৩ জনের মধ্যে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে প্রথম দশে থাকা আট জন হেরে গিয়েছেন। পুরুষদের মধ্যে জ়েরেভ (তৃতীয় বাছাই), লোরেঞ্জো মুসেত্তি (৭), রুন (৮) ও মেদভেদেভ (৯) হেরেছেন। মহিলাদের মধ্যে গফ (২), পেগুলা (৩), ঝেং (৫) ও বাদোসা (৯) বিদায় নিয়েছেন। টেনিসের ওপেন এরা শুরু হওয়ার পর কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রথম রাউন্ডে শীর্ষ ১০ বাছাই খেলোয়াড়ের মধ্যে এত জন এর আগে এত তাড়াতাড়ি বিদায় নেননি। এই প্রথম বার মহিলাদের শীর্ষ তিন তারকার মধ্যে দু’জন প্রথম রাউন্ডেই হেরে গিয়েছেন।
সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারত। পুরুষদের দ্বিতীয় বাছাই কার্লোস আলকারাজ়, পঞ্চম বাছাই টেলর ফ্রিৎজ় ও ২৫ নম্বর বাছাই ফেলিক্স অগার আলিয়াসিমেও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। প্রথম রাউন্ডে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে জিতেছেন তাঁরা। তেমনটা হলে গফের পাশাপাশি ফরাসি ওপেনে পুরুষদের চ্যাম্পিয়ন আলকারাজ়ও বিদায় নিতেন। তা হলে অঘটন আরও বাড়ত।
পুরুষদের যে ১৩ জন বাছাই প্রথম রাউন্ডে বিদায় নিয়েছেন তাঁরা হলেন— জ়েরেভ (৩), মুসেত্তি (৭), রুন (৮), মেদভেদেভ (৯), কেরুনডোলো (১৬), হুমবার্ট (১৮), পপিরিন (২০), চিচিপাস (২৪), শাপালভ (২৭), বুবলিক (২৮), মিকেলসন (৩০), গ্রিকসপুর (৩১) ও বেরেত্তিনি (৩২)। মহিলাদের ১০ বাছাই খেলোয়াড় বিদায় নিয়েছেন প্রথম দু’দিনে। তাঁরা হলেন— গফ (২), পেগুলা (৩), ঝেং (৫), বাদোসা (৯), মুচোভা (১৫), ওস্তাপেঙ্কো (২০), ফ্রেচ (২৫), কস্টিউক (২৬), লিনেত্তি (২৭) ও কেসলার (৩২)।
ফরাসি ওপেনে লাল সুরকির কোর্টে খেলার পর উইম্বলডনে ঘাসের কোর্টে ফিরে সমস্যায় পড়েছেন গফ। তাঁর মতে, অল ইংল্যান্ডে নামার আগে ঘাসের কোর্টে কয়েকটা ম্যাচ খেলা উচিত ছিল। তিনি বলেন, “এই কোর্ট আমার কাছে ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘাসের কোর্টে কয়েকটা ম্যাচ খেলতে হত। ফরাসি ওপেন জেতার পর উল্লাস করারও সময় পাইনি। সম্পূর্ণ অন্য ধরনের কোর্টে নামতে হয়েছে। তবে অজুহাত দিতে চাইছি না। ঘাসের কোর্টে সফল হওয়ার জন্য আমার খেলায় কিছু বদল করতেই হবে।”
৩৮ বারের চেষ্টায় এখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ছোঁয়া হয়নি জ়েরেভের। ফাইনালে উঠে হেরেছেন। কিন্তু এ ভাবে প্রথম রাউন্ডে হারতে হবে ভাবেননি। মানসিক সমস্যা হচ্ছে তাঁর। নিজেকে একা লাগছে। উইম্বলডন থেকে বিদায় নিয়ে পুরুষদের তৃতীয় বাছাই বলেন, “এত একা আগে কখনও লাগেনি। কিছুই ভাল লাগছে না। শুধু টেনিস নয়, টেনিসের বাইরেও কিছু ভাল লাগছে না। টেনিস নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু টেনিসের বাইরে কিছু একটা নিয়ে আমার সমস্যা হচ্ছে। সেটা সামলাতে হবে। মনে হচ্ছে কেরিয়ারে প্রথম বার আমার মনোবিদের সাহায্য নিতে হবে। মানসিক ভাবে খুব সমস্যা হচ্ছে।”
এ বার উইম্বলডনে খেলোয়াড়দের সমস্যায় ফেলছে গরম। ওন্স জাবেউর গরমের কারণেই ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন। এরিনা সাবালেঙ্কা-সহ বেশ কিছু খেলোয়াড়কে দেখা গিয়েছে, ম্যাচের মধ্যে মাথায় আইসপ্যাক ধরে রাখতে। তবে এই আবহাওয়ায় ব্রিটেনের খেলোয়াড়দের কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছেন মোট ১০ ব্রিটিশ খেলোয়াড়।
কথায় বলে, সকাল দেখলেই বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। যে ভাবে প্রথম রাউন্ডেই ৬৪ জনের মধ্যে ২৩ জন বাছাই খেলোয়াড় বিদায় নিয়েছেন সেখানে পরের রাউন্ডগুলোয় কী অপেক্ষা করছে সে দিকে নজর রয়েছে টেনিসপ্রেমীদের।