১০ বছর পলাতক ‘রাজু বেনারসি’, খুনে অভিযুক্তকে ধরতে শ্রমিকের ছদ্মবেশে জঙ্গলে হানা দিল্লি পুলিশের

প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পলাতক ছিলেন খুনের মামলায় অভিযুক্ত। তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পুলিশ। কিন্তু কিছুতেই অভিযুক্তের কোনও সন্ধান পাচ্ছিল না দিল্লি পুলিশ। শেষে গোপন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছত্তীসগঢ়-ঝাড়খণ্ড সীমানায় গভীর জঙ্গলে শ্রমিক এবং ঠিকাদারের ছদ্মবেশে হানা দেয় দিল্লি পুলিশের একটি দল। সেই অভিযানেই গ্রেফতার করা হয় রাজু বেনারসি নামে এক অভিযুক্তকে।

মামলার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৩ সালে। জিতেন্দ্র লাম্বা নামে এক ব্যক্তিকে খুন করতে ভাড়াটে খুনিদের কাজে লাগিয়েছিলেন তাঁরই ভাই রাজেশ সিংহ লাম্বা। অভিযোগ, সম্পত্তি সংক্রান্ত কারণেই নিজের ভাইকে খুন করিয়েছিলেন রাজেশ। দিল্লির ডিসিপি (ক্রাইম) সঞ্জয় সাঁই জানিয়েছেন, ভাড়াটে খুনিদের আগ্নেয়াস্ত্র জোগান দিয়েছিলেন অভিযুক্ত রাজু। তা ছাড়া দুই ভাড়াটে খুনি কোনও সমস্যায় পড়লে, সে ক্ষেত্রে তৃতীয় আততায়ী হিসাবে কাজ সামলানোর দায়িত্ব ছিল রাজুর। গুলি চালানোর পর আততায়ীরা কোন পথে পালাবেন, সেই পরিকল্পনারও দায়িত্বে ছিলেন এই ধৃত।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় মোট ছ’জন অভিযুক্ত ছিলেন। বিগত এক দশকে বিভিন্ন সময়ে বাকি অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছেন। কিন্তু ষষ্ঠ অভিযুক্তকে কিছুতেই ধরতে পারছিলেন না পুলিশকর্মীরা। গত এক দশকে পুলিশের একাধিক দল পাঠানো হয়েছিল রাজুকে ধরার জন্য। প্রত্যেক বারই তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি রাজু যাতে পুলিশকে দেখে আগেভাগে চিনতে না পারে, সে জন্য পুলিশের তল্লাশি দলও ঘন ঘন বদলাতে হয়েছিল।

অভিযুক্তের খোঁজে তাঁর পরিবার ও আত্মীয়দের মিলিয়ে শতাধিক মোবাইল নম্বর পুলিশের নজরে ছিল। সম্প্রতি পুলিশের অপরাধদমন শাখার নজর পড়ে রাজুর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরের দিকে। ওই আত্মীয় ঝাড়খণ্ডেরই বাসিন্দা। গত কয়েক দিন ধরেই ছত্তীসগঢ়-ঝাড়খণ্ড সীমানায় গভীর জঙ্গলে বার বার ওই আত্মীয়ের মোবাইলের লোকেশন ধরা পড়ছিল। কিছু ক্ষণের জন্য মোবাইলটি চালু হয়েই আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। যা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের।

দিল্লি পুলিশের ছ’জনের একটি দলকে পাঠানো হয় অভিযানে। ছত্তীসগঢ়-ঝাড়খণ্ড সীমানায় ওই জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে ছদ্মবেশে কাজ করতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। কেউ সেজেছিলেন শ্রমিক। কেউ সেজেছিলেন ট্রাকের খালাসি। এই ভাবে কিছুদিন কাজ করতে করতে এক ট্রাকচালকের গতিবিধি দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় পুলিশের কাছে। ওই ট্রাকচালকই খুনের মামলায় অভিযুক্ত। এক দশক ধরে পালিয়ে বেড়াতে বেড়াতে নিজের নাম বদলে ফেলেছিলেন তিনি। একটি ট্রাক কিনেছিলেন। পরিচয় ভাঁড়িয়ে ট্রাক চালাতেন ওই এলাকায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.