০.১২ সেকেন্ডের পর ০.০৯ সেকেন্ড! আবার স্টাম্প ধোনির, উইকেটের পিছনে আরও ক্ষিপ্র মাহি

০.১২ সেকেন্ড! সময দেখে চমকে গিয়েছিলেন সকলে। এত কম সময়ে কী ভাবে একজন উইকেটরক্ষক কোনও ব্যাটারকে স্টাম্প আউট করেন? কোন বিজ্ঞান রয়েছে তার নেপথ্যে? আলোচনা শুনে হয়তো মুচকি হেসেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কারণটা বোঝা গেল পরের ম্যাচেই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সূর্যকুমার যাদবকে স্টাম্প করতে যে সময় ধোনি নিয়েছিলেন, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফিল সল্টকে স্টাম্প করতে ততটা সময়ও নিলেন না। মাত্র ০.০৯ সেকেন্ড। অর্থাৎ, এক সেকেন্ডের ১০০ ভাগের ন’ভাগ। এ বারের আইপিএলে আরও এক বার দেখা গেল ধোনির জাদু। ৪৩ বছরের মাহি আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কাছে বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা।

চিপকে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে চালিয়ে খেলছিলেন সল্ট। মাত্র ১৫ বলে ৩২ রান করে ফেলেছিলেন। বাধ্য হয়ে আফগানিস্তানের স্পিনার নুর আহমেদকে বলে আনেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড়। পঞ্চম ওভারের শেষ বলটি ‘রং ওয়ান’ করেন নুর। অর্থাৎ, তাঁর বল পিচে পড়ে ডানহাতি ব্যাটারের ভিতরের দিকে ঢোকার বদলে বাইরের দিকে যায়। সল্ট বলটি বুঝতে পারেননি। তিনি ব্যাট চালান। ব্যাটে-বলে হয়নি। বল যায় ধোনির কাছে। তার পরেই উইকেটের পিছনে বিদ্যুতের ঝলক।

সল্ট বুঝতেও পারেননি আউট হয়েছেন তিনি। কারণ, ক্রিজ় ছেড়ে তিনি বার হননি। সূর্য তবু নুরের বিরুদ্ধে ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে খেলার চেষ্টা করেছিলেন। আর ঢুকতে পারেননি। তাঁর ব্যাটের ফলো থ্রু শেষ হওয়ার আগেই ধোনি স্টাম্প আউট করেন তাঁকে। সল্ট ক্রিজ়ের মধ্যেই ছিলেন। তাঁর পা সামান্য উঠেছিল। সেই পা নামানোর আগেই ধোনি উইকেট ভেঙে দেন। লেগ আম্পায়ারের কাছে আউটের আবেদন করার সময় ধোনির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল সল্ট আউট। সতীর্থদের তিনি ইশারায় বোঝান, পা ক্রিজ় থেকে উঠেছিল। তখনই তিনি উইকেট ভেঙেছেন।

তৃতীয় আম্পায়ারও রিপ্লে দেখে জানিয়ে দেন, সল্ট আউট হয়েছেন। পরে জানা যায়, মাত্র ০.০৯ সেকেন্ডে সল্টকে স্টাম্প আউট করেছেন ধোনি। আগের বার ০.১২ সেকেন্ড দেখে যাঁরা অবাক হয়েছিলেন তাঁরা এ বার আরও অবাক হয়েছেন। ধারাভাষ্যকারের তার পরের কয়েক মিনিট ধরে শুধুই ধোনির সেই স্টাম্প আউটের বিশ্লেষণ করেন। বার বার রিপ্লে দেখানো হচ্ছিল। কী ভাবে তিনি এত দ্রুত স্টাম্প আউট করেছেন, তা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।

উইকেটের পিছনে ধোনির এই বিদ্যুতের ঝলক অবশ্য নতুন নয়। ভারতীয় দলে খেলার সময় অনেক বার এ ভাবে ব্যাটারকে স্টাম্প আউট করেছেন তিনি। তার নেপথ্যে রয়েছে বিজ্ঞান। ভরত সুন্দর্শনের লেখা বইয়ে ধোনির উইকেটরক্ষণের ব্যাখ্যা করা আছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, “সাধারণত উইকেটরক্ষকের হাতে যখন বল আসে, তখন সে নিজের হাত শরীরের দিকে টেনে নেয়। তাতে বলের গতি ক্রমশ কমে যায়। বল যাতে হাত থেকে না বেরিয়ে যায়, সেই কারণেই এই পদ্ধতিতে বল ধরেন উইকেটরক্ষকেরা। কিন্তু ধোনি সেটা করেন না। ধোনি হাত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। অর্থাৎ, বল যে দিকে থেকে আসছে, ধোনির হাত সেই দিকেই এগিয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হচ্ছে, ধোনির হাত সেই সময় শক্ত (স্টিফ) হয়ে যায় না। অর্থাৎ, ও বেশি শক্তি প্রয়োগ করে না। কারণ বেশি শক্তি দিয়ে বল ধরতে গেলে, হাতে লেগে বল বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বল ধরার সময় ধোনি হাত হালকা রাখে। তাতে বলের গতি কিছুটা কমে যায়। শুধু স্পিনারেরা নন, অনেক পেসারের বিরুদ্ধেও উইকেটের কাছে দাঁড়াতে দেখা যায় ধোনিকে।”

ধোনি যদিও মনে করেন এই ধরনের স্টাম্পিং আগে থেকে ভেবে করা যায় না। দেখে মনে হয়, তা হঠাৎ করে হয়ে গিয়েছে। ধোনি বলেছেন, “ওই স্টাম্পিং হঠাৎ করে হয়ে গিয়েছে। যদি খুঁটিয়ে দেখেন তা হলে বুঝবেন, ওটা দেখে মনে হবে ট্রাকের পিছন থেকে একটা চালের বস্তা যেন হঠাৎ করে পড়ে গিয়েছে। বলটাকে ভাল করে দু’হাতে ধরতে পারছি কি না, সেটাই আসল। আমি বরাবর দু’হাতে ক্যাচ ধরতে ভালবাসি। তাই এ ধরনের স্টাম্প করতে ভাল লাগে। কখনও আমাকে দেখবেন না উইকেটের পিছনে খুব ঝাঁপাচ্ছি বা এক হাতে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরার চেষ্টা করছি। কিপার হিসাবে আমি বেশ শান্ত এবং সেটাই ভাল লাগে আমার।”

সংক্ষেপে

  • চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
  • গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.