নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ভুতুড়ে ভোটার লিস্ট রয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কর্মী সভার পরে এই বিষয়টি নিয়ে কালীঘাটে নিজের বাড়িতে বৈঠক করেন তিনি। তাঁর দাবি, ভোটার লিস্ট ক্লিন করতে হবে। কিন্তু সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দীলিপ ঘোষ সহ বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, হিন্দু ভোটারদের নাম বাদ দিতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এই কাজ করছে তৃণমূল।
ভুতুড়ে ভোটার লিস্ট নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। মুখ্যমন্ত্রী নিজের দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বুথের ভোটার লিস্ট খতিয়ে দেখতে। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার এসব জায়গা থেকে ভুয়ো নাম ভোটার লিস্টে ঢোকানো হচ্ছে। তাই দলের কর্মীদের ভোটার লিস্ট হাতেনাতে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ আসলে রাজ্যের হিন্দুদের ভোট দিতে না দেওয়ার পরিকল্পনা বলে দাবি করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বিজেপি নেতা বলেন, ভোটের প্রায় এক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার লিস্ট নিয়ে যেভাবে তাঁর বক্তব্য রেখেছেন তাঁর দলের কর্মীদের কাছে, আমার মনে হয় বাঙালি হিন্দুদের বিশেষ করে আরো বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। আমি দেখতে পাচ্ছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইপ্যাককে নিয়ে প্ল্যানিং করছেন। আগামী দিনে হিন্দু বাঙালিদের ভোট ভোটার লিস্ট থেকে কেটে বাদ দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা কলকাতা, হাওড়া, শ্রীরামপুর, ব্যারাকপুর এই সমস্ত জায়গায় প্রচুর হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোট আছে। এই হিন্দিভাষী হিন্দুদের ভোটকে কাটার জন্য এখন থেকে পরিকল্পনা চলছে। তাই আমি সমস্ত হিন্দু বাঙালীদের এবং অন্যান্য হিন্দুদের যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন তাদের বিশেষ করে অনুরোধ করছি আপনারা ভোটার লিস্ট সংশোধন হলেই আপনাদের নাম ভোটার লিস্টে আছে কী নেই দেখে নিন। নাহলে আপনাদের এই গণতান্ত্রিক অধিকার ডঃ বি আর আম্বেদকরের প্রদান করা এই অধিকারকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দলবল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।” তিনি অনুরোধ করেছেন, “নতুন ভোটার তালিকা বা ভোটার তালিকা যখন সংশোধন চলবে সেই সময় নিজেদের নাম ভোটার তালিকায় আছে কিনা তা চেক করে দেখে নেবেন। আমি নিজেও দেখব আমার নাম ভোটার লিস্টে আছে কি নেই। আপনারাও দেখুন চেক করুন এবং সতর্ক হোন। তাঁর দাবি, হিন্দু বাঙালিদের শেষ করতে এই চক্রান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। তাঁর হাত থেকে সকলে মিলে একত্রিত হয়ে লড়াই করে বাংলাকে রক্ষা করতে হবে।”
শুভেন্দু অধিকারী দলের কর্মীদের নিয়ে ভুতুড়ে ভোট নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, আধার এবং এপিক লিঙ্ক করে রেশন দোকানের মত বায়োমেট্রিক মেশিন দিয়ে পশ্চিমবাংলার নির্বাচন করতে হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, কমিশনের আশীর্বাদ নিয়ে দিল্লি ও মহারাষ্ট্রের মতো বাংলাতেও ফিল্ড সার্ভে না করে এ আর ও’র সাহায্যে অপারেটরদের কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ভুতুড়ে ভোটারদের নাম তোলা হচ্ছে। বাংলার ভোটারের একই এপিক কার্ডে হরিয়ানা, গুজরাটের লোকদের নাম তুলছে।
এ বিষয়ে দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ভোটার লিস্ট নিয়ে তৃণমূলের বড় চক্রান্ত আছে। প্রতি বিধানসভায় পাঁচ থেকে ১০ হাজার করে বাংলাদেশিদের নাম ঢোকাতে চাইছে তৃণমূল, তাই আগেভাগেই উনি বিজেপির দিকে তির ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন।
দিলীপ ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, কুম্ভ মেলায় কোটি কোটি মানুষ যেভাবে যাচ্ছে তাতে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। বুঝতে পেরেছে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রের মতো পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরাও ভেলকি দেখাবে। আগামী বিধানসভা ভোটে হিন্দু ভোট ওনার বিরুদ্ধে যাবে এটা বুঝতে পারছেন বলেই বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের এনে রাজ্যের ভোটার লিস্টে ঢোকাতে চাইছেন।