ওড়িশার ভয়াবহ ঘটনা!৭ বছর আগের ওই ঘটনা ‘ওয়েডিং বম্ব’ কাণ্ড নামে ভারতজুড়ে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করে। এক কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি ২০১৮ সালে এক নবদম্পতিকে প্যাকেট-বোমা পাঠিয়ে তাদেরকে হত্যা করেছিল।
বুধবার ওড়িশা আদালত ৫৬ বছর বয়সি অধ্যক্ষ পুঞ্জিলাল মেহেরকে হত্যা, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ও বিস্ফোরক ব্যবহারের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে। ৭ বছর আগের ওই ঘটনা ‘ওয়েডিং বম্ব’ কাণ্ড নামে ভারতজুড়ে রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিয়ের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই বোমাটি একটি বিয়ের গিফটের আড়ালে লুকিয়ে পাঠানো হয় পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নববিবাহিত সৌম্য শেখর সাহুর (২৬) বাড়িতে।
উপহারটি খুলতেই বিস্ফোরণে নিহত হন সৌম্য ও তার ৮৫ বছর বয়সি ঠাকুমা জামেমানী সাহু। মারাত্মক আহত হন নববধূ রীমা সাহু। তখন তার বয়স ছিল ২২ বছর।
কী ঘটেছিল সেদিন?
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওড়িশার বোলাঙ্গির জেলার শান্ত শহর পাটনাগড়ে ওই ঘটনা ঘটে। বিয়ের পরদিন দুপুরে রান্নাঘরে বসে রান্না করছিলেন তারা। তখনই আসে একটি পার্সেল। তাতে প্রেরকের নাম লেখা ছিল— ‘এস কে শর্মা’। পাঠানো হয়েছে প্রায় ২৩৫ কিমি দূরের ছত্তিশগড়ের রায়পুর থেকে।
তবে এরপরই ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা। পার্সেলের সুতো টানতেই ঘটে শক্তিশালী বিস্ফোরণটি। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিহত হন নববিবাহিত সৌম্য ও তার ঠাকুমা। গুরুতর আহত হন নববধূ রীমা— কান ফেটে যায় তারা, সারা শরীরে পোড়া ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি।

তদন্তের নাটকীয় মোড়
এদিকে বহু ফোন কল বিশ্লেষণ, শতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরও পুলিশ প্রথমে কোনো স্পষ্ট সূত্র পায়নি। হঠাৎ একদিন এক বেনামী চিঠি আসে পুলিশের কাছে। সেখানে বলা হয়, বোমাটি পাঠানো হয়েছিল ‘এস কে সিনহা’ নামে এবং একে ‘প্রতারণা ও অর্থ’ সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করা হয়। এই চিঠিটাই মূলত তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তদন্তে দেখা যায়, পার্সেল রশিদে সত্যিই লেখা ছিল ‘সিনহা’। আর এটা জানতেন কেবল একজনই, যিনি পাঠিয়েছেন! পুলিশ ধরে নেয়, চিঠির লেখকই আসল অপরাধী।
যেভাবে ধরা পড়েন পুঞ্জিলাল
নিহত সৌম্যের মা স্থানীয় কলেজের একজন শিক্ষিকা ছিলেন। চিঠির ভাষাশৈলী ও শব্দচয়ন দেখে তিনি চিনে ফেলেন—এটি তারই এক সহকর্মীর লেখা, যিনি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন— পুঞ্জিলাল মেহের।
প্রথমে পুলিশ কলেজ রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়নি। পরে অধ্যক্ষ পুঞ্জিলাল মেহেরকে প্রধান সন্দেহভাজন করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি নানা অবাস্তব গল্প বললেও শেষমেশ পুলিশ জানায়, তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন অপরাধ।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দাবি, তিনি দিওয়ালিতে মজুদ করা বাজি থেকে গানপাউডার সংগ্রহ করে নিজ হাতে বোমা তৈরি করেন। একটি সিসিটিভিহীন কুরিয়ার অফিস থেকে তা পাঠান রায়পুর থেকে। ভ্রমণের সময় মোবাইল ফোন ফেলে যান বাড়িতে, যাতে লোকেশন ধরা না পড়ে। এমনকি তিনি বিয়ের অনুষ্ঠান ও পরবর্তী শোকসভাতেও অংশ নেন।
আদালতের রায়
আদালত মামলাটিকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে আখ্যা দিলেও এটিকে ‘বিরলতমের মধ্যে বিরল’ পর্যায়ের মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করেনি। ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মূলত এ ঘটনা গোটা ভারতে এক ধরনের শক তৈরি করেছিল— একটি আনন্দঘন মুহূর্ত হয়ে উঠেছিল বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতায়।