একটি প্রচলিত বাংলা প্রবাদ, “আগে দিয়ে বেড়া/ তবে ধরো গাছের গোড়া।” বাগানের মূল্যবান গাছ গরু-ছাগলের মুখ থেকে বাঁচাতে বেড়া বাঁধার চল চিরকালের। ‘Horticulture’ কথাটির অন্তঃস্থলেও সেই বেড়া বাঁধারই নির্যাস আছে, কারণ ক্রপ প্রোটেকশনের বার্তা আছে তার মধ্যে। Horticulture কথাটি এসেছে Latin ‘Hortus’ কথাটি থেকে, যার অর্থ Garden অর্থাৎ বাগান। আর ‘Cultura’ শব্দের অর্থ Cultivation. ‘Garden’ বলতে প্রাচীন কাল থেকেই বোঝানো হয় ‘protected enclosure with high walls or similar structures surrounding the housing premises; place used to grow fruit, vegetables, flowers, ornamental plants.’ সুতরাং cultivation of garden plants within protected enclosures-ই হচ্ছে হর্টিকালচার। যেহেতু লোককবির চিরন্তন দর্শন হল, “মাটির বেড়া, মাটির জমিন মাটিই বিশ্বময়”, তাই মাটির বেড়া কেমন ভাবে সফল হতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত দিতে এই ক্ষুদ্র নিবন্ধ।
বাগানের চারপাশে ছোটো পরিখা খনন করে সেই মাটি পাশেই ভেতরের ভূ-খণ্ডে তুলে রাখলে যেমন চারপাশে জল সংরক্ষণের একটি নালা গড়ে উঠবে, পাশাপাশি এই পরিখা জলে পূর্ণ অথবা জলশূন্য অবস্থাতে থাকাকালীন তা টপকিয়ে ভেতরের কৃষি বা উদ্যানক্ষেত্রে গবাদি পশুর প্রবেশ কষ্টকর হয়ে উঠবে। মালদা জেলায় একসময় এরকম মাটি কেটে দেওয়ালের আদলে ব্যবহার করতে দেখেছি। এরকম আমবাগানও দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের লাল ও কাঁকুড়েমাটি এলাকায় এইরকম বেড়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলো। অবাঞ্ছিত গবাদিপশু মাঠে ঢুকে যাতে গাছপালা খেয়ে ফেলতে না পারে, এ তারই এক উত্তম প্রচেষ্টা। পরিখার প্রস্থ প্রায় ১ মিটার, পরিখার গভীরতা প্রায় সোওয়া এক মিটার। বাগানে ঢোকার জন্য কোনো গরু বা ছাগল কখনও লাফিয়ে নালায় পড়লেও, পাশের মাটির দেওয়াল বেয়ে বাগানে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এই ছবিগুলি তোলার জন্য আমি বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্ব ভারতীয় সমন্বিত কৃষিবন প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের কাছে ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি৷ এই বেড়া টেকসই, প্রায় খরচহীন, কার্যকরী এবং জমির সদ্ব্যবহার করার সুযোগ আছে। কারণ নালাগুলি জল নিষ্কাশনের জন্য এবং জল ধরে রাখার জন্যও বিবেচিত হতে পারে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
